বৃহস্পতিবার , ১৭ আগস্ট ২০১৭ | ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এবার আমন ধানও ব্যাপক ক্ষতির মুখে

Paris
আগস্ট ১৭, ২০১৭ ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বন্যায় বোরো ফসলের পর এবার আমন ধানের চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বলছেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ফসলটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এর আগে আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অথচ বাংলাদেশে চালের জন্য এই দুইটি ফসলের উপরই বেশি নির্ভর করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ২১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দশকে তারা এরকম বন্যার আর মুখোমুখি হননি। মানুষ এবং গবাদি পশুর পাশাপাশি বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে ক্ষেতের ফসল।

আগাম বন্যায় বোরো ধানের বড় ক্ষতির পর এবার পানিতে ডুবে আছে আমন ধানের চারাও। তবে কৃষি গবেষকরা বলছেন, পানি তাড়াতাড়ি নেমে গেলে হয়তো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।

লালমনিরহাটের কৃষক শুক্কুর আলী তেরো বিঘা জমিতে আমনের চারা লাগিয়েছিলেন। তার সব চারা এখন পানির নিচে। সেই সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে কলার বাগান আর সবজি ক্ষেতও।

শুক্কুর আলী বলছেন, “গ্রামের সবার জমি পানিতে ডুবে আছে। ধান গাছ তো ডুবেই গেছে, কলার বাগান, পেঁপের ক্ষেত, সবজি বাগান সব পানিতে ডুবে আছে।”

তিনি জানান, বাড়িতে কিছু ধান আছে, সেটা ভেঙ্গে তারা খাচ্ছেন, তাতে হয়তো দুইমাস চলবে। এরপর কী করবেন জানেন না।

ঠাকুরগাঁয়ের কৃষক আমানুল্লাহ বলছেন, “বন্যার পানিতে তার বীজতলা অনেকটাই নষ্ট হয়ে আছে। এখন পানি কিছুটা নেমেছে, কিন্তু বীজতলা পুরো কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে।”

উত্তরের জেলাগুলোয় কোনও কোনও এলাকা থেকে বন্যার পানি খানিকটা কমলেও, পরিস্থিতির এখনো ততটা উন্নতি হয়নি।

পাশাপাশি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে রাজবাড়ি, ফরিদপুর বা মুন্সিগঞ্জের মতো দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলো। আশঙ্কা রয়েছে, ভারতের উজানের আটকে থাকা পানি বাংলাদেশ দিয়ে নামতে শুরু করলে আরেক দফা পানি বাড়তে পারে।

কিন্তু এই বন্যায় আমন বা আউশ ধান চাষের ক্ষতির আশঙ্কা কতটা?

বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য অবসরে যাওয়া মাঠ সেবা পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস বলছেন, “উত্তরবঙ্গে আমাদের যেসব ধানের চাষ হয়তো, সেগুলোর অনেকগুলো জাত পানিতে অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। যেসব এলাকায় এসব জাতের চাষ হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি কম হবে।”

“তবে এর বেশি পানি থাকলে এসব চারাও নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমন ধান চাষের সুযোগ থাকবে। বিশেষ করে স্থানীয় জাতের কিছু ধান আছে, যা একটু দেরিতেও ভালো ফলে। কিন্তু সেসময় পর্যন্তও যদি বন্যা থাকে, তাহলে হয়তো এবার আর তাদের ধান চাষের সুযোগ থাকবে না।”

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে কৃষকদের উচিত হবে বরং রবিশস্যের দিকে নির্ভর করা, বিশেষ করে আগাম রবিশস্য চাষ করতে পারলে তারা আর্থিক ক্ষতি হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

তবে চৈতন্য কুমার দাস আরও বলছেন, “এখনো বন্যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েনি। যতটা জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তার কম জমিতেই বন্যা হয়েছে। তাই এখনো আশা রয়েছে।”

বাংলাদেশের ধানের বড় একটি অংশ আসে বোরো আর আমন মৌসুম থেকে। কিন্তু এর আগে ফসল ওঠার আগেই আগাম বন্যায় অনেক এলাকার বোরো ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আর এখন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে আমন বা আউশ ধান নিয়েও।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণা প্রধান মোঃ আনছার আলী বলছেন, আরো কয়েকদিন পরে ক্ষতির বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

তিনি বলছেন, “ক্ষতির বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখনো আমন চাষের সুযোগ আছে। আমরা পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহের উদ্যোগও নিয়েছি। কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত বন্যায় ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমন্বিতভাবে বিকল্প উদ্যোগ নেয়া হবে, যাতে কৃষকরা সহায়তা পান।”

দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামের কৃষকরা বলছেন, পানি না নামা পর্যন্ত তাদের এখন করণীয় কিছু নেই। আবার পানি নামার পরেও নতুন করে বীজ সংগ্রহ এবং বিনিয়োগ করতে হলে তাদের ঋণ করতে হবে।

তাদের এই ক্ষতির বিষয়ে কি করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা?

কুড়িগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন বলছেন, “জেলায় আমাদের যত কর্মকর্তা আছে, সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে, যাতে বন্যার পানি নেমে গেলেই তারা কৃষকদের সবরকম সহায়তা করতে পারেন।”

“স্থানীয় জাতের যেসব বীজ রয়েছে, সেগুলো চাষেও কৃষকদের সবরকম সহায়তা দেয়া হবে। বীজ আর সার সহায়তা চেয়েও আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।”

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কৃষকদের হয়তো রবিশস্যের দিকেই ঝুঁকতে হবে।

তবে তাদের ধারণা, বোরো ফসল আশানুরূপ না হওয়ায় এর মধ্যেই যেমন চালের জন্য আমদানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, বন্যায় আমনের ক্ষতি হলে হয়তো সেই নির্ভরশীলতা আরো খানিকটা বাড়বে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - কৃষি