এফআর টাওয়ার দুর্নীতি মামলা: তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৬ থেকে ২৩ তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগে এফআর (ফারুক-রূপায়ণ) টাওয়ারের মালিক, রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলার তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

বুধবার কমিশনের সিদ্ধান্তে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিককে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর বিকালেই তিনি এফআর টাওয়ার নির্মাণ সংক্রান্ত রাজউকের নকশার অনুমোদন ও প্লট বরাদ্দের মূল নথি চেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের বরাবর চিঠি লেখেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৬ থেকে ২৩ তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগে ২৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত মূল নথি আবশ্যক। চিঠিতে তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরবরাহের জন্যও রাজউক চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৬ থেকে ২৩ তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগে এফআর টাওয়ারের মালিক এসএমএইচআই ফারুক, রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যান- কেএএম হারুন ও হুমায়ূন খাদেম এবং রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করে দুদক।

দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তানভীর-উল-ইসলাম, রাজউকের সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক ও বিসিএসআইআরের সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী, সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবদুল্লাহ আল বাকি, গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।

এ মামলায় ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফআর টাওয়ারের ১৯ তলা থেকে ২৩ তলা নির্মাণ, বন্ধক প্রদান ও বিক্রি করার অভিযোগে দণ্ডবিধির সাতটি ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

আরেক মামলায় এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা অনুমোদন থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ লঙ্ঘন করে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়।

এই মামলায় দণ্ডবিধির চারটি ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলাও এফআর টাওয়ারের মালিক এসএমএইচআই ফারুক, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদেম, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে আসামি করা হয়।

এ ছাড়াও অপর দুই আসামি হলেন- রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান ও সাবেক অথরাইজড অফিসার সৈয়দ মকবুল আহমেদ।

সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা অনুমোদনে জমির মালিক এসএমএইচআই ফারুক হোসেন এবং কাশেম ড্রাইসেল ব্যাটারির মালিক ও এফআর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভির-উল-ইসলাম এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট ইমারত পরিদর্শকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

ফারুক হোসেন ১৯৯৬ সালে তার মালিকানাধীন ১০ কাঠা জায়গাতে ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকে আবেদন করেন। প্রথমে ১৫ তলার অনুমোদন পেলেও পরবর্তীতে রাজউকের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে অবৈধভাবে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ করেন।

কিন্তু পরবর্তীতে অবৈধভাবে ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। ২০০৭ সালে বিষয়টি তদন্ত করে অনুমোদিত নকশায় অতিরিক্ত পাঁচ তলা নির্মাণের প্রমাণ পেয়েও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ দুপুরে রাজধানীতে বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ২৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অনেকে আহত হন। অনেক পরিবারের বহু স্বপ্ন চিরদিনের ন্যায় মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। স্বজন হারিয়ে অনেক পরিবার এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনাসহ উদ্ধার তৎপরতা চালাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কঠিন সময় পার করতে হয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যুর এই বড় ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হিসেবে স্থান পায়।

বহুতল ভবনটিতে ফায়ার ফাইটিংয়ের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বেশি মুনাফা লাভের আশায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণে পদে পদে অনিয়মের আশ্রয় নেয়। আগুনের ঘটনার পর মানুষ জানতে পারে, ভবনটি ছিল এক ধরনের মৃত্যুকূপ।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। জড়িতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সব মহল থেকে জোরালো দাবি ওঠে।