এডিপি অগ্রগতি বেড়ে ১৩ শতাংশ, বেহাল দশা স্বাস্থ্য-বাণিজ্যে

করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মহামারিতে গত অর্থবছরের চেয়ে উন্নয়ন ব্যয়ে গতি এসেছে। দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি সহায়তাও এসেছে বেশি। তবে বেশ কয়েকটি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে।

চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এডিপির আকার বড় হলেও গত বছরের তুলনায় আলোচ্য সময়ে মাত্র ১ শতাংশ বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে এডিপি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৩০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এবারের এডিপির আকার মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আজ রোববার (১৯ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হার। করোনার থাবায় ২০২০-২১ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৭৫ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। এবার মৌসুম ভালো, বৃষ্টি-বাদল নেই। আশা করছি, বাকিটা পূরণ করতে পারবো। আমরা এডিপি বাস্তবায়নে আরও দ্রুত উন্নতি করছি।’

কয়েকটি মন্ত্রণালয়-বিভাগে এডিপি বাস্তবায়ন হার ধীরগতি রয়েছে—এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এ বিষয়ে মিটিং হবে। যেসব মন্ত্রণালয়-বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে ভালো করেনি তাদের তাগাদা দেওয়া হবে।’

এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, মাত্র শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ। চার মাসে বিভাগটি ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ করেছে, অথচ তাদের মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। করোনা সংকটেও এডিপি বাস্তবায়ন সন্তোষজনক না স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে, অগ্রগতি ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবায় মোট এডিপি বরাদ্দ রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ চার মাসে তাদের খরচ হয়েছে মাত্র ৫১৮ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও এডিপি বাস্তবায়ন হারে ধীরগতি দেখা গেছে, অগ্রগতি মাত্র ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ ৪১৯ কোটি টাকা, অথচ খরচ হয়েছে মাত্র ৭ কোটি।

আইএমইডি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে দুই ডিজিট অতিক্রম করতে পারেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৬ দশমিক ২৪, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ৩৪, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণে ৮ দশমিক ২৪, ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ৭৭, জননিরাপত্তা বিভাগে ৬ দশমিক ৭৯, সুরক্ষা বিভাগে ২ দশমিক ৭৫, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ৮১, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৮ দশমিক ৬৪, অর্থ বিভাগে ৬ দশমিক ৭০ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।

এছাড়া পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯, আইন ও বিচার বিভাগে ৩ দশমিক ১০, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ২ দশমিক ৫৩, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ৮ দশমিক ৪৮, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৫, পররাষ্ট্রে ৪ দশমিক ৯৯ ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ৩৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। চার মাসে তাদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

এডিপিতে ১০টি বৃহৎ প্রকল্পে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬ হাজার ১৬২ কোটি, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি–৪) ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ও পদ্মা সেতুতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ