এখনও অধরা রিশান ফরাজী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী ধরা পড়লেও তারা আপন ভাই ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী এখনও অধরা। এছাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে ১২ আসামির মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর আসামি।

মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী (২৩), ৪ নম্বর আসামি চন্দন (২১), ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান (১৯), ১১ নম্বর আসামি অলিউল্লাহ অলি (২২) ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় (২১) গ্রেফতার হয়েছে। ২৭ জুন সকালে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের বাবা আবদুল আলিম দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

জানা যায়, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী আপন এই দুই ভাই সরাসরি রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নিয়েছিল। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বরগুনা থেকে গ্রেফতার হয়েছে রিফাত ফরাজী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। তবে তার ভাই রিশানকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

রিফাত ও রিশান বরগুনা শহরের ধানসিঁড়ি সড়কের দুলাল ফরাজীর ছেলে। রিফাত ফরাজী বরগুনা কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও ২০১৪ সালে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে। এরপরই সে বরিশালের ইনফ্রা পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। ভর্তির পর সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

পরপর সেমিস্টারে অকৃতকার্য হওয়ার পর সে বরগুনায় চলে আসে। গড়ে তোলে সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই গ্রুপে আছে তার ভাই রিশান ফরাজীও। ইতিমধ্যে তাদের হাতে অসংখ্য মানুষ লাঞ্ছিত হয়েছেন। তুচ্ছ কারণে লোকজনকে মারধর করত তারা। এসব কারণে কয়েকবার তারা গ্রেফতার হলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভায়রার ছেলে হওয়ায় খুব স্বল্প সময়েই মুক্তি পায় তারা।

জানা গেছে, প্রতিদিন রিফাত ফরাজীর বাহিনীর আনাগোনা ছিল বরগুনা সরকারি কলেজে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, নতুন শিক্ষার্থীদের ০০৭ গ্রুপের সদস্য করাসহ কলেজ ক্যাম্পাসে মাদকের আখড়া বসিয়েছিল রিফাত বাহিনী। ছোট ভাই রিশানের দায়িত্ব ছিল বন্ড গ্রুপের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করা এবং ওই সদস্যদের পর্যবেক্ষণে রাখা।

কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা ও বখাটেপনায় অতিষ্ঠ থাকলেও রিফাত বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রিফাত বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও তিনি আমলে নিতেন না।

এ ব্যাপারে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য হল, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোটখাটো ঘটনা অহরহ ঘটে। আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এলে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি ওদের দু’বার পুলিশে সোপর্দ করেছিলাম।’

বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘাতকদের চিহ্নিত করা হয়েছে। হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিশানসহ পলাতক আসামিরা পুলিশের নজরদারিতে আছে। শিগগিরই তারাও ধরা পড়বে।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধকে আমরা অপরাধ হিসেবেই দেখব। এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। ইতিমধ্যে মামলার অর্ধেক আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

২৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাত শরীফকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীর নাম বলেন।

জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ছাত্রলীগের মানববন্ধন : বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, রিফাত শরীফকে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বরগুনার বামনা উপজেলা ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার সকালে বামনা প্রেস ক্লাবের সম্মুখ সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোর্শ্বেদ শাহরিয়া গোলদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন জমাদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন পিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান সগির, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আল-আমীন হোসেন জনী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।