শুক্রবার , ১৫ জুলাই ২০২২ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাবে শ্রীলংকা

Paris
জুলাই ১৫, ২০২২ ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ঠিক যেন শ্রীপদ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা বানের স্রোত। এক্ষুণি যেন শ্রীলংকার চতুর্থ দীর্ঘ (১৪৫ কিমি.) কেলানি নদীর জল উপচে ভেসে যাবে কলম্বো শহর।

সম্বিত ফিরে পেতেই দেখলাম এ হচ্ছে বাঁধভাঙা মানুষের স্রোত। জ্বালানি ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি আর অগণিত সমস্যায় দেওয়ালে পিঠ, আর পিঠের সঙ্গে পেট ঠেকে যাওয়া জনমানুষের ঢল। এ হচ্ছে ৯ জুলাইয়ের কথা। প্রেসিডেন্টের ভবন, সচিবালয় এবং মন্দিরে হামলা চালায় রুষ্ট জনতা।

সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পালানোর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী কাউকেই আর দেখা যায়নি। যদিও উভয়েরই পদত্যাগ করার কথা ছিল বুধবার। এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাবেন লংকানরা।

এই নাটকীয় ঘটনাগুলো হঠাৎ করে ঘটেনি। মাসের পর মাস দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সরকারি তহবিলের অপচয় এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন এক চলমান প্রক্রিয়া।

এসবই যে গণঅভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক কারণ, সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে খাদ্যসহ মূল্যস্ফীতি ৫৪.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। পরিবহণ খরচের পাশাপাশি তীব্র জ্বালানি সংকট নিত্যদিনের হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবন অত্যন্ত চাপপূর্ণ। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, হাসপাতালগুলো ধুঁকছে প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি ও পরিবহণসংকটে কর্মীদের অনুপস্থিতির দরুন।

বেসরকারি খাতগুলো কাজ করছে ন্যূনতম কর্মীদের নিয়ে। কারণ কর্মী ছাঁটাইয়ের মহামারিতে জর্জরিতে পুরো শ্রীলংকা। অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বড় ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

প্রাথমিকভাবে বাজেট ঘাটতি বাড়তে থাকায় কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তা প্রভাবিত করেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে। এ কারণে অনেকেই বর্তমান সরকার এবং বিশেষ করে রাজাপাকসে পরিবারকে এই অবস্থার জন্য দায়ী করছেন। জনগণের দাবি একেবারে অমূলক নয়।

বিশেষ করে ২০১০ সাল থেকে রাজনীতিতে রাজাপাকসের ব্র্যান্ড স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গুণ্ডামি এবং দুর্নীতির সংমিশ্রণ দেশকে রসাতলে নিয়ে গেছে।

এই বছরের মার্চের দিকে শুরু হওয়া জনগণের বিক্ষোভের আগে ছিল ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকাণ্ড, ভালো বেতনের দাবিতে স্কুল শিক্ষকদের ব্যাপক বিক্ষোভসহ কৃষকরা প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের রাসায়নিক সারের ওপর রাতারাতি নিষেধাজ্ঞা নাটকীয় মোড় তৈরি করে। শুরু হয় কৃষি খাতের পতন। সবকিছুই পরিস্থিতিকে রাজাপাকসে পরিবারের প্রতিকূলে নিয়ে যায়।

এখন রাজনৈতিক সংকটের মুখে দেশ। প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্প স্থাপন করেছে। কলম্বোর বিখ্যাত গালে ফেস গ্রিন এখন রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। সারা দেশে প্রতিদিনই সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ চলছে।

পরবর্তী সময়ে কী ঘটবে বা ঘটতে পারে তা নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক নেতারা। সংসদ নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা পর্যন্ত অস্থায়ী এই পদে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে স্পিকারের ডাকা সংসদের বৈঠকে সব দলের নেতারা ৫টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

১. প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। ২. স্পিকারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। ৩. যত দ্রুত সম্ভব নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে সংসদকে। ৪. একটি ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৫. যত দ্রুত সম্ভব নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে রাজি হলেও কোনো তারিখ নির্ধারণ করেননি।

মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ- বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি এবং রান্নার গ্যাসের অভাবে সৃষ্ট বিক্ষোভের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং বিভিন্ন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

আগামী কয়েকদিন শ্রীলংকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যা স্পষ্ট তা হলো-বিশাল জনগণের অভ্যুত্থান উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করে দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনীতিবিদ ও দলগুলোকে বুঝতে হবে প্রতিবাদ আন্দোলনের তাৎপর্য। জনগণের দাবি শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তি নয়, বরং তারা জবাবদিহিতা চায়। তারা সৎ রাজনীতির মাধ্যমে জনসেবার আড়ালে সম্পদ আহরণকে মেনে নেবে না।

ড. হরিণী অমরাসুরিয়া : নির্বাহী কমিটির সদস্য, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টি

 

সুত্রঃ যুগান্তর

সর্বশেষ - মতামত