এক যে ছিল সাগর-রুনি, তাদের ছেলে মেঘ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ছোটবেলায় দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে রাজা-রানির গল্প শোনেনি এমন মানুষ খুব কম। তবে এ প্রজন্মের রূপকথার এমন গল্প শোনার ভাণ্ডার তেমন সমৃদ্ধ নয়। বলছিলাম রাজা-রানির গল্পের কথা। ওই সময়টায় ছোটদের জন্য দাদি-নানির গল্পের ঝুড়িটা ছিল রাজা-উজির, রাজপুত্র-রাজকন্যা, পরী ইত্যাদিতে ভরপুর। এসবের যোগফলে বেশ জমত গল্পের আসরটা।

 

এক ছিল রাজা, আর এক ছিল রানি। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে। এমন অনেক গল্পের মতোই আমাদের কাছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি এখন হয়ে গেছে রূপকথার গল্পের মতো। অথচ কত তরতাজা তাঁদের স্মৃতিগুলো। এক বুক হতাশা নিয়েই লিখতে হচ্ছে এক ছিল সাগর সরওয়ার, এক ছিল মেহেরুন রুনি। তাঁদের এক ছেলে মেঘ ছিল এবং আছে।

 

এমন দুজন প্রিয় সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর শুনতে হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাত-সকালে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্রেকিং, তারপর খবরের সন্ধানে ছুটে চলা ঘটনাস্থলে। কী করে হলো, কারা করল, কেন করল, নেপথ্যে কারা ছিল- এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়েছি আমরা অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকরা। কিছু প্রশ্নের জবাব মিললেও অজানা-অধরা রয়ে গেছে অনেকগুলোই।

 

মামলার তদন্তভার রয়েছে বর্তমানে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের হাতে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে অনেক সাংবাদিক তদন্ত সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো তথ্য মেলে না। বছরের পর বছর ধরে চলছে তদন্ত। কেন এত দেরি, কেন এত কূলকিনারাহীন- র‍্যাবের কাছে স্পষ্ট জবাব নেই। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, পৃথিবীর অনেক আলোচিত হত্যার রহস্য ১০ বা ২০ বছর পরেও উদঘাটিত হয়েছে। খোঁড়া যুক্তি শুনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মুখ বুঝে সহ্য করাই যেন নিয়তি। চাইলেও বর্তমানে সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু জানা সম্ভব হয় না।

 

প্রতিবছর সাগর-রুনির মৃত্যু দিবসের দু-একদিন আগে নিয়ম করে সাংবাদিকরা দল বেঁধে র‍্যাব সদর দপ্তরে যান। কিছু পুরোনো তথ্য নতুনের মতো করে পরিবেশন করা হয় জাতির উদ্দেশে। হত্যা-পরবর্তী সময়কার ফাইল ফুটেজ, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কিছু আহাজারি, র‍্যাবের গৎবাঁধা বাণী আর একটু মন খারাপ করা মিউজিকের সমন্বয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে মৃত্যুবার্ষিকীর দিন পরিবেশন করা হয়। আর ১১‌ ফেব্রুয়ারি দিনের যে কোনো অংশে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠান থাকে আর সাংবাদিক নেতাদের কিছু লোকদেখানো অনুষ্ঠান করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পার করে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির পথেই চলছে সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি। আর সেদিন এক অনুষ্ঠানে তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য জানা নেই।

 

প্রতিদিন দেশে এত এত ঘটনা ঘটছে- গুলশান হলি আর্টিজান, সাঁওতালদের ওপর হামলা, তনু-মিতু হত্যার মতো অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এসবের মধ্যে সাগর-রুনি নিয়ে ভাবার সময় কোথায় মানুষের!

 

বিচিত্র এত ঘটনার মাঝে হারিয়ে যায় আমাদের সাগর-রুনি। বলতে গেলে স্মৃতির ঘরে সাগর-রুনির ইতিহাসের ওপর ধুলো জমে গেছে। যেন রাজা-রানির গল্পের মতো ইতিহাসের ছিন্নপাতা। স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ আর  মৃত্যুর গ্যারান্টি আমাদের কে দেবে? তাই তো চেয়ে থাকি বিশাল আকাশের দিকেই, যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলে? সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি ওপারের অদেখা পৃথিবীতে ভালো থাকুন…

লেখক : সাংবাদিক, বাংলাভিশন।

সূত্র: এনটিভি