সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
আইয়ুব পাগলা যেন প্রমাণ করলেন ‘যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে, যার কেউ নেই তার সবাই আছে।’ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আইয়ুব পাগলা বলতেন ‘একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খাম’। সেই আইয়ুব পাগলা আজ নেই, কিন্তু রেখে গেছে অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ।
চলতি বছরের ২০ সেপ্টোবর বিকেলে আইয়ুবের মৃত্যুর খবরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের উল্ল্যাবাজারের মানুষজন মর্মাহত হয়েছিল। পরে আইয়ুবকে উত্তরউল্ল্যা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। তার শোকবার্তার ব্যানার, পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের ফেসবুকেও জায়গা করে নিয়েছে। আইয়ুবের মৃত্যুর সঙ্গে কেউ কাফনের কাপড়, কেউ বাঁশ, কেউ আগরবাতি নিয়ে কবরস্থ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
আইয়ুবের জানাজার নামাজ আদায় করার পর সিদ্ধান্ত হয় মজলিস করার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে শুক্রবার ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে ‘আইয়ুব-এর
স্থানীয়রা জানায়, কোথা থেকে আইয়ুব পাগলা উল্যাবাজারে আসে এর সঠিক কোন তথ্য জানা না থাকলেও এলাকার বাসিন্দা হয়ে বসবাস করত এখানে। আটকে গিয়েছিল ভরতখালীর মায়াজালে। এ মায়াজালই তাকে এখানে আটকে রেখেছিল শেষের যাত্রা পর্যন্ত।
উল্ল্যাবাজার কলোনীর বাসিন্দা বিজয় কুমার বলেন, আইয়ুব পাগলা কারো ক্ষতি করতো না। সবাই ওকে ভালোবাসতো। হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত। শুক্রবার তার মজলিস খেলাম। হিন্দু মুসলিম এখানে ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই ভাই ভাই।
ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বলেন, মাঝে মাঝে সে অদৃশ্য হয়ে যেত। ১০-২০ বিশ দিন কখনওবা ১-২ মাস মাস পর আবারও হাজির মায়াজালের ঠিকানায়। জিজ্ঞেস করতাম কিরে আইয়ুব কই গিয়েছিলি? উত্তর ছিল “সড় তো, একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খাম” যে টা ছিল ওর নিত্য দিনের ডায়ালগ। অনেকে অনেকভাবে আনন্দ করত আইয়ুবকে নিয়ে। সেসব এখন “আইয়ুব স্মৃতি” হয়ে রয়ে গেল আমাদের মাঝে। ভরতখালী ইউনিয়নের সাঘাটা-গাইবান্ধা রোডের ফুলছড়ি রোডের সংযোগস্থলকে “আইয়ুব পাগলার মোড়” রাখার দাবি এই জনপ্রতিনিধির।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদ ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি বলেন, আইয়ুবের জানাজার নামাজ আদায় করার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মজলিস করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার “আইয়ুব-এর মজলিস” করা হল। পরপারে আইয়ুব যেন শান্তিতে থাকে সেই দোয়া করি। সবার হৃদয়ে আইয়ুব পাগলা বেঁচে থাক চিরকাল।
মজলিস’ সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও এই মজলিসে অংশগ্রহণ করেন। এখানে মুসলমাদের জন্য ছিল ৩টি গরু ও ১টি খাসি এবং হিন্দুদের জন্য ২টি খাসি দিয়ে আলাদা রান্না করা হয়েছিল। এই মজলিসের উদ্ধোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি।
সূত্র: সমকাল