এক প্লেট ভাতের দাম আট হাজার টাকা!

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশে এলাকায় খাবারের দাম এখন আকাশচুম্বী। এক প্লেট ভাত বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আট হাজার টাকায়। আর এক বোতল পানির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। দাম আকাশচুম্বী হলেও ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়েই তা কিনতে হচ্ছে মানুষকে। দেশ ছাড়তে মরিয়ে হাজার হাজার আফগান এই মুহূর্তে ভিড় করছে কাবুল বিমানবন্দরে। এ কারণেই এই এলাকায় নজিরবিহীন ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে উদ্ধার অভিযানের গতি আরও বেড়েছে। তালেবানের কাবুল দখলের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৩ হাজার জনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই ঘটিবাটিসহ আফগানিস্তান ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে অবশিষ্ট সেনাদেরও সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক হাজার হাজার আফগানের স্বপ্ন সফল না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যুৎ গতিতে রাজধানী কাবুল দখলে নিলেও এখন পর্যন্ত একটা গুলিও খরচ করেনি তালেবান। তারপরও অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত। আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দর এখন অরাজক পরিস্থিতির কেন্দ্রস্থল। যে যার মতো এখানে-সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশ ছাড়তে প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। লোকজন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খোদ মার্কিন সেনারা। ৩১ আগস্টের মধ্যে বিদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার শেষ সময়। হাতে সময় আছে আর মাত্র পাঁচদিন। বিদেশি নাগরিকদের বহনকারী বিমানে যেন একটু ঠাঁই হয়, তারই জোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে সাধারণ আফগানদের মধ্যে। রয়টার্স জানিয়েছে, দিনরাত আফগানরা বিমানবন্দরে পড়ে থাকায়, পানির দাম গিয়ে ঠেকেছে ৪০ ডলারে, যা টাকার হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।

স্থানীয় এক আফগান বলেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মানুষের ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। সবচেয়ে করুণ দশা নারী ও শিশুদের। ফজলুর রহমান নামে আরেক আফগান জানান, আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভাত-পানি। তার কথায়, ‘কাবুল বিমানবন্দরে এক বোতল পানির মূল্য ৪০ ডলার। ভাত ১০০ ডলার। আফগান মুদ্রা চলে না। সবাই ডলার চাচ্ছে। এত দামের খাবার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।’ কাবুল বিমানবন্দরের এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সত্ত্বেও বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সময় বাড়ানোর পশ্চিমা প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে তালেবান। সংগঠনটির মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তাদের শত শত বিমান রয়েছে। তাদের যতদ্রুত সম্ভব নিজেদের নাগরিক ও সহযোগীদের বের করে নিয়ে যাওয়া উচিত।’

যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনও বলছে, ৩১ তারিখের শেষ মিনিট পর্যন্ত কার্যক্রম জারি রেখে বেরিয়ে আসবে তারাও। তবে অবস্থা দৃষ্টে ৩১ আগস্টের আগে সেটা সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে। রাশিয়া এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করবে না বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন। দক্ষ ও মেধাবী আফগানদের নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে করেছে তালেবান, তার জবাবে হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভিসা পাওয়ার যোগ্য আফগান নাগরিকরা তালেবানের আহ্বান উপেক্ষা করে নিজ দেশ ছাড়বে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, মার্কিন প্রশাসন আশা করছে, ‘আগামী দিনগুলোতে বিশেষ ভিসা পাওয়ার যোগ্য যেসব আফগান দেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য কাবুল বিমানবন্দরে যেতে চাচ্ছে, তাদের বাধা দেওয়া হবে না।’ এরই মধ্যে গোটা আফগানিস্তানে খাদ্য সংকট দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এজন্য জরুরি সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। তবে সার্বিক সহায়তা বন্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মুখপাত্র জানান, আফগানের চলমান সংকটে উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন তারা।

 

সূত্রঃ যুগান্তর