এক তলা ভবন সংস্কার ব্যয় দুই কোটি টাকা, পলেস্তারাতে ফের ফাটল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশি রেলওয়ে হাসপাতাল ভবন সংস্কারের নামে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একতলা ভবনের হাসপাতালটি সংস্কারের জন্য ব্যয় করা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এরই মধ্যে ঠিকাদার কাজও শেষ করে ফেলেছেন। কিন্তু যেসব স্থানে সংস্কার কাজ করেছেন ঠিকাদার, সেগুলোর অনেক স্থানেরই পলেস্তার ও চুনকামে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে করে বিপুল অংকের টাকা ব্যয় করে সংস্কারকাজটি প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে বর্তমান যে ভবন রয়েছে, তার চেয়ে আরো উন্নতমাণেরই ভবন নির্মাণ করা যেত। কিন্তু ওই পথ না মাড়িয়ে ঠিকাদারকে বাড়তি সুবিধা করে দিতে ও লুটপাটের জন্য সংস্কারের পথে হাটে সেসময়কার রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, পাকশি রেলওয়ে হাসপাতালটি যখন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন এখানে চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল মাত্র দুজন। আবার গড়ে রোগীও আসত ৭-৮ জন করে। এখন এখানে কাগজে-কলমে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। তবে নিয়মিত অফিস করেন বড় জোর দুইজন। গড়ে প্রতিদিন এখনো এখানে ৭-৮ জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। তারা সকলেই রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের পরিবারের সদস্য। আবার মাঝে মাঝে দুই-একজন রোগীকে ভর্তিও করানো হয় ঘন্টা কয়েকের জন্য। কারণ এখানকার চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। জটিল বা মাঝারি মাণের রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে যান। যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে যান, তাদের মধ্যে জ্বর, স্বর্দী, কাশি, এলার্জি, পেটের সমস্যাসহ ছোট অসুখে আক্রান্তরা। হাসপাতালটির যে ভবনটি রয়েছে সেটি দীর্ঘদিনের পুরনো। ফলে কোথাও চুনকাম, বা কোথাও পলেস্তারা উঠে গিয়েছিল। আর এসব সংস্কারের জন্য।ি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

ওই হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই কাজটি দেওয়া হয় পাবনার স্থানীয় আনোয়ারুল আলম বাবু নামের এক ঠিকাদারকে। তিনি কাজটি পাওয়ার পরে ভবনটি সংস্কার কাজও সম্পন্ন করেছেন সম্প্রতি। কিন্তু সংস্কারকাজ কেবলই নামেই হয়েছে। আবার পলেস্তারা ও চুনকামে দেখা দিয়েছে ফাটল।

ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো জানান, পুরনো ভবন নামমাত্র সংস্কার করার ফলে তেমন কোনো কাজে আসেনি। ফলে প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে গেছে হাসপাতালের ভবনটি। এতে করে রেলওয়ে যে বরাদ্দ রেখেছে এই কাজে, সেটি পুরোটাই জলে যেতে বসেছে।

তাঁরা বলেন, সংস্কারের নামে যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে সেটি দিয়ে এর চেয়ে ভালোমাণের একটি ভবনই করা যেত। কিন্তু সেটি না করে রেলওয়ের অর্থ লুটপাট করতে ও ঠিকাদারকে সুবিধা দিতে সংস্কারের পথে হেঁটেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে করে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।’

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-২) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কাজ সম্ভবত শেষ হয়েছে। কিন্তু বিল এখনো কিছু বাকি আছে। তবে কি পরিমাণ বাকি আছে বলতে পারব না। সংস্কারকাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটিও বলতে পারব না।’

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, ‘ঠিকাদার কিভাবে কাজ করেছে, সেটি বলতে পারব না। কারণ আমি চলে আসার পরে বেশিরভাগ কাজ হয়েছে। তাই অনিয়ম হয়েছে কিনা জানা নাই। তবে টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হয়নি বা অর্থ লুটের আশায় এটি করা হয়নি।’

সদ্য বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘একতলা ভবন সংস্কারের জন্য এতো টাকা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু যেহেতু কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, কাজেই সেটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। তবে সংস্কারে কোনো অনিয়ম হয়নি।’