এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন বাইডেন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

রাজদণ্ড হাতে বুড়া রাজার শরীরে যেমন তারুণ্যের শক্তি নেই, তেমনি অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। বিশ্বজুড়ে সব ইস্যুতে পৌরহিত্য করলেও আগের মতো আর শক্তিশালী প্রভাব নেই। তাই কূটচাল আর নানা ফন্দিফিকিরই ভরসা।

সাম্রাজ্যবাদের কবরস্থান আফগানিস্তানে নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাশিয়া যখন নাজেহাল, তখন পেছন থেকে তালেবানদের রসদ-সাহস দুইই জুগিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক ধরনের প্রক্সি যুদ্ধ চলেছে তখন। কিন্তু সেই তালেবানের হাতেই দিনের পর দিন মার খেয়ে ত্যক্ত বিরক্ত মার্কিন সেনারা যখন লেজগুটিয়ে পালালো, তখন আর বিশ্বের অলিখিত রাজা হিসাবে তাদের মুখ থাকে কীভাবে?

 বলা হচ্ছে, রাজধানী কাবুলের ভেতরে জাওয়াহিরির লুকিয়ে থাকার খবর জানতো তারা। এই ইস্যুকে আগামীদিনে আরও জোরালো করবে যুক্তরাষ্ট্র। একে তাই বলা যায়, এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন জো বাইডেন।

তালেবানদের শিক্ষা দিতে এবার ভিন্ন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশে দেশটির তহবিল স্থগিত করে রেখেছে তারা। যাতে এক ধরনের নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে দেশটিতে। তালেবানরা শিক্ষা পাচ্ছে কিনা, সেটি জানা না গেলেও আফগান জনগণের বেঁচে থাকাটা যে বহুমূল্য হয়ে উঠেছে সেটি বুঝতে বাকি নেই কারো। এমন দুর্দিনে সাধারণ আফগানদের পাশে নেই কেউ।

তালেবান আর আল-কায়েদা, বিশ্বাসের মাপকাঠিতে সংগঠন দুটির পার্থক্য খুব বেশি নেই। তাই তালেবানের ভেতর বাইরে সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রভাব বিস্তর। বিশেষ করে চরমপন্থী হাক্কানি নেটওয়ার্ক। আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর তাদের সাথে তালেবানের অন্যান্য অংশের বিরোধ নিয়ে খবরও বের হয়। যদিও এ সব বিষয়ে মুখ খোলেনি তালেবান। আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে একদল উগ্রপন্থী গঠন করে জঙ্গি সংগঠন আইএস। যাদের বিভৎসতা অকল্পনীয়। তাই বিশ্বাসের মাপকাঠির শুরুটা এক হলেও আইএসের চরম শত্রু, তালেবান ও আল কায়েদা। বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর বিভক্তি আর কোন্দলে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হয়ে পড়া আল কায়েদার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিশরীয় চোখের ডাক্তার আয়মান আল জাওয়াহিরি। ২০১১ সাল থেকে নেতৃত্ব দিলেও তাকে প্রকাশ্যে তেমন দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে ভিডিও বার্তা ছাড়া তৎপরতাও তেমন ছিল না।

দুর্বল হয়ে পড়া গোষ্ঠীর একজনকে হত্যার পর কেন এত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? উত্তরের জন্য একটু বোঝা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র কেমন চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বছরের প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে দেড় শতাংশের বেশি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে দশমিক ৯ শতাংশ।

চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে দেশটি। হু হু করে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দাভাবের শঙ্কা করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। যদিও পলিটিকোর জরিপ বলছে, ৬৫ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, এরইমধ্যে মন্দাভাব চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। একই বিশ্বাস, ৭৮ শতাংশ রিপাবলিকানদের।

এমন দুর্দশার বিপরীতে গেল ৭ মাসে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে তেমন কোনো সাফল্যই ধরা দেয়নি। আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াজিরি হত্যা বাইডেনের ব্যর্থতার সেই ক্ষতে সামান্য প্রলেপ হিসাবে কাজ করবে।

একইসাথে তালেবান সরকারকে আরেকটু কোণঠাসাও করতে পারবে তারা। কারণ দোহা চুক্তি অনুযায়ী কোনো সন্ত্রাসীকে জায়গা দিতে পারবে না তালেবান সরকার। বলা হচ্ছে, রাজধানী কাবুলের ভেতরে জাওয়াহিরির লুকিয়ে থাকার খবর জানতো তারা। এই ইস্যুকে আগামীদিনে আরও জোরালো করবে যুক্তরাষ্ট্র। একে তাই বলা যায়, এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন জো বাইডেন।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল 24।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ