রবিবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

একেকটা আসন নিলামে দিয়েছে বিএনপি

Paris
ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮ ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির হোতা বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ওই লন্ডনে বসে বসে নাটাই ঘোরায়। আল্লাহ যদি দিন দেয় তবে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামি ধরে নিয়ে এসে বাংলাদেশে তার বিচারের রায় কার্যকর করব।’ গতকাল শনিবার সিলেটে এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ওই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল পৌনে ১১টায় সিলেটে পৌঁছার পর হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজী বোরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করতে যান তিনি। সেখানে মাজার জিয়ারত ও জোহরের নামাজ পড়েন। এরপর সিলেট সার্কিট হাউসে যান দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের জন্য। এরপর বেলা ৩টা ১২ মিনিটে সিলেট নগরের চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নানা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কথা, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা এবং সিলেট বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশের মান-ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করেছিল। হত্যা, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি—এটাই ছিল তাদের নীতি। আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।’ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ খুনের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজকে শরণার্থী হয়ে, বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে। আর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিলামের মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে নির্বাচনে তারা কী করেছে? একেক সিটে চার-পাঁচজন করে নমিনেশন দিয়েছে। দেওয়ার পরে কী করেছে? একেকটা সিট অকশনে (নিলামে) দিয়েছে। যে যত টাকা দেবে সে নমিনেশন পাবে। এই অকশন দিতে গিয়ে তাদের এখন ছ্যারাবেরা অবস্থা। কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। আপনারা জানেন, এই সিলেটে, ইনাম চৌধুরী সাহেব, তিনি কী বলেছেন? একেকজনের কাছে টাকা চায়, দিতে না পারলে নমিনেশন নাই। দিতে পারলে নমিনেশন আছে। একজন যদি এক কোটি দেয়, আরেকজন দুই কোটি দেয়। একজন যদি পাঁচ কোটি দেয়, কেউ যদি সাড়ে পাঁচ কোটি দেয় তবে পাঁচ কোটি বাদ; যে সাড়ে পাঁচ কোটি আসো। এভাবে তারা অকশন দিয়েছে। আপনারা বলেন, তারা কী রাজনীতি করে?’

সিলেটের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে শ্রীহট্ট নামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমরা এই সিলেট বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছি। আগে চায়ের নিলাম শুধু চট্টগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যেন হয় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা শ্রমিকরা সব সময় নৌকায় ভোট দেয়। তাদের আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। তাদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি। তাদের মজুরি বৃদ্ধি করেছি, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ—চার জেলায়ই অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয়, সেটা সরকারি বা বেসরকারি যা-ই হোক করে দেব। সিলেট বিভাগ করেছি, সেই বিভাগের জন্য যা যা করা দরকার সব করে দিচ্ছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কারণ আমি দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। নিজের ভাগ্য না, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে দেব, বাংলাদেশের মানুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেব, এটাই ছিল লক্ষ্য। পরে এটা প্রমাণ হয়েছে, যে অভিযোগ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এনেছিল সব ভুয়া, বানোয়াট।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষ কিছু পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটা সংগঠন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাজ করে যাচ্ছে।’

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় গিয়ে মানুষের সম্পদ লুটপাট করেছে, হত্যা-খুন করেছে, সন্ত্রাস করেছে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সারা দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মান ইজ্জত সব ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।’

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুত্ফুর রহমান। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সুজিত রায় নন্দী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আব্দুল মোমেন, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, ইমরান আহমেদ, মাহমুদ উস সামাদ। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের চার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন।

এবার লাঙলে ভোট দেন, পরে সব আ. লীগে নেব : জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯ আসনে মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। ওই সময় মহাজোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিজবাহকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপাতত লাঙলে ভোট দেন, এরপর সব নৌকায় নিয়ে আসব। কোনো চিন্তা নাই।’

পরে মৌলভীবাজার-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী বিকল্পধারার নেতা এম এম শাহীনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার ধানের শীষের প্রার্থীকে নৌকায় নিয়েছি। বলেছিলাম না, সব নৌকায় নিয়ে নেব।’ এম এম শাহীন আগে বিএনপি করতেন।

ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে রাখা উচিত ছিল : জনসভায় বক্তব্যের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা সাবেক বিএনপি নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। ওই সময় শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে জানতে চান ইনাম আহমেদ চৌধুরী কোথায়। ইনাম আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত নেই জানালে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁকে রাখা উচিত ছিল।

রেজা কিবরিয়ার ধানের শীষে নির্বাচন লজ্জার : সাবেক অর্থমন্ত্রী (আওয়ামী লীগ আমলের) শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুঃখের বিষয়, এই হবিগঞ্জ-১-এ ধানের শীষ নিয়ে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তাঁর পিতার হত্যাকারী ওই ধানের শীষ। কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করেছে ওই বিএনপি। আর সেই কিবরিয়া সাহেবের ছেলে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু থাকে না।’

সর্বশেষ - রাজনীতি