শাহিনুল ইসলাম আশিক
দু’বোন দাঁড়িয়ে। হাতে আইসক্রিম। আনিকা পানি খাবে। তাই অপেক্ষা পানির জন্য। হঠাৎ অচমকা শব্দ। পিছনে তাকিয়ে দেখি বোন শারমিনা আশরাফিয়া আনিকা (১৩) নেই। ভয়ে চিৎকার শুরু করে বোন ঋতুও। কিন্তু বোন অানিকা আর বাস (অ্যারো বেঙ্গল) ও দেওয়ালের সঙ্গে চাপা লাগা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কাত্রাচ্ছে অচেনা এক ভয়াবহ যন্ত্রনায়।
মানুষ অনেক চেষ্টা করেছে বের করার জন্য। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কারণ বাস ও অনিকার মধ্যে চুল পরিমানের ফাঁকা ছিলো না। আর ফাঁকাই বা থাকবে কেনো? ফাঁকা থাকলে বধোয় বাঁচানো যেতে অবলা মেয়েটাকে। কিন্তু চেষ্টার এক বৃন্দুও কমতি হয়নি। সাধারণ মানুষের চেষ্টায় ঘাতক বাস সড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরে আনিকা। হাত নারালেও চোখে মুখে ছিলো কষ্টের মেঘ। লোকো মুখে শোনা যাচ্ছিলো মেয়েটি আর বাঁচবে না রে।
তারাহুরো তোলা হলো অটো রিক্সায়। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অনেকেই বলা বলি করছিলো। কিন্তু তেমন সারা শব্দ নেই। বাধ্য হয়ে তোলা হলো একটি অটো রিক্সায়। ছোটানো হলো খুব দ্রুত হাসপাতালের দিকে। কিন্তু কই লাভ হলো না। ততক্ষণে মৃত্যুর বোবা যন্ত্রনায় কাত্রাচ্ছে নিরিহ বেচারী আনিকা। হাসপাতালের টলিম্যান দ্রুত জরুরি বিভাগের নিয়ে গেলো। তখনো তাকিয়ে আনিকা।
কিন্তু সেই তাকিয়ে থেকেই পারি জমিয়েছে অজানার উদ্দেশ্যে। এই কথাটা সবার অজানা থাকলেও ডাক্তার সাহেব ঠিক বুঝতে পেরেছেন বেচারী শেষ নিশ্বাস কিছুক্ষণ আগে ত্যাগ করেছে। ডাক্তার বলে উঠলো ‘সিইজ ডেথ’।
ততক্ষণে খবর পেয়ে মা শাহানাজ বেগম বেকুল মনে সোনা মানিকে দেখতে ছুটে আসছেন হাসপাতালে। স্বজনদের চোখে পানি দেখে বুঝেছেন কি হয়েছে মেয়ের। তবুও অবুজের মতো ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে। তাকিয়ে ছিলো আনিকা। মা শাহানাজ দেখে চোখ মুখ নারতে থাকে। মেয়ে বেঁচে থাকলে তো মার ডাকা সারা দেবে। তখন মা শাহানাজ বেগমকে সবাই ধরে বাইরে নিয়ে আনলো। মায়ের সঙ্গে মেয়ের এই দেখা শেষ দেখা।
কথায় আছে কষ্টের জীবন কষ্টেই যায়। শারমিনা আশরাফিয়া আনিকা। বাবার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর এলাকায়। বাবা সাত বছর আগে মারা যায়। তার পর থেকে আনিকা ও শাহানাজ বেগম নানা বাড়িতে থাকতো। সেখান থেকে পড়া শোনা করতো আনিকা। আনিকা বেশির ভাগ সময় নানা বাড়িতে থাকতো।
গত প্রায় তিন থেকে চার মাস আগে শাহানাজ বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় মহানগরীর শাহ মখদুম থানার ভাড়ালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুস্তম আলীর সঙ্গে। নওদাপাড়ায় তার বাবা রুস্তম আলীর ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। রুস্তম আলীর আগের ঘরের মেয়ে মিতু ও ঋতু নামের দুই মেয়ে রয়েছে। তবে আনিকার সৎ বাবা রুস্তম আলী বেশির ভাগ সময় মেয়ে আনিকাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করতো।
ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বহরমপুর এলাকায় আনিকার জানাযা শেষে দফন করা হয় বলে চাচা ইব্রাহীম আলী রানা জানায়।
স/আ