শনিবার , ২ মার্চ ২০১৯ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ঋণের সুদ হিসাবে বড় পরিবর্তন চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Paris
মার্চ ২, ২০১৯ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সব ধরনের ঋণের সুদ হিসাব পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, সব ধরনের ঋণের সুদ হিসাব ছয় মাস ভিত্তিতে হওয়া যুক্তিযুক্ত।

তিন মাস ভিত্তিতে নয়। একই সঙ্গে ঋণের বিপরীতে চক্রবৃদ্ধি হারে (সুদের ওপর সুদ আরোপ) সুদ আরোপ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সরল হারে (সুদের ওপর সুদ আরোপ নয়) সুদ আরোপের পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। এতে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ঋণের সুদের হার কিছুটা হলেও কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঋণের সুদ বছর ভিত্তিতেই হিসাব করার নিয়ম। গ্রাহকদের সঙ্গে এভাবেই কথা হয়। কিন্তু বাস্তবে সেটি মানা হয় না। কেননা, যে কোনো সুদের হার নির্ধারিত হয় বছরভিত্তিক সময়কাল ধরে। সেখানে এর আগে কোনো হিসাব বের করা হলে ঋণগ্রহীতারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নানা রকম ফাঁকফোকর ও সরল সুদের পরিবর্তে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের ফাঁদ পাতা হয়। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। তারা মনে করেন, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্র জানায়, ঋণের ওপর সুদ আরোপ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি সুদ আরোপের দেশি-বিদেশি পদ্ধতি পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ব্যাংক ঋণের অন্যতম ব্যবহারকারী উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের পদ্ধতি বাতিল করে সরল হারে সুদ আরোপ পদ্ধতি চালু করার দাবি করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, নতুন পদ্ধতি চালু হলে ঋণের সুদহার কমবে। এতে কমে যাবে ঋণের খরচ, কমবে ব্যবসা খরচও। ফলে পণ্যের দাম কমবে, এতে ভোক্তারা লাভবান হবেন। রফতানির ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়বে। মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ কমবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণের সুদ বছর ভিত্তিতেই হিসাব করার নিয়ম। গ্রাহকদের সঙ্গে এভাবেই কথা হয়। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তা একেক ব্যাংক একেক ভাবে করে। যে কারণে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

ঋণের বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে এ বৈষম্য হতো না। এত ব্যাংক থাকার পরও যেহেতু প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠেনি সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতি করে দেয়া উচিত। সূত্র জানায়, বাণিজ্যিকগুলো এখন ঋণের সুদ হিসাব করে তিন মাস পরপর। এই সুদ পরিশোধ করা না হলে মূল ঋণের সঙ্গে যোগ করে। এতে মূল ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এর ওপর আবার সুদ আরোপ করে। এ প্রক্রিয়ায় ঋণের সুদহার এক থেকে দেড় শতাংশ বেড়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে- তিন মাস পরপর সুদ আরোপ না করে ৬ মাস পরপর ঋণের সুদ হিসাব করার প্রক্রিয়া চালু করতে। অর্থাৎ ৬ মাস পরপর ঋণের সুদ হিসাব করে এটি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করতে। তবে এই সুদ কখনোই মূল ঋণের সঙ্গে যোগ করার ক্ষেত্রে সায় নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

ঋণের সুদ হিসাবের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি চালু করতে গেলে কোনো সমস্যা হবে কিনা, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যাংক ঋণের সুদ কীভাবে হিসাব করা হয় সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক একেএম আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে একই বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা রয়েছেন।

কমিটি ঋণের সুদ হিসাবের ব্যাপারে একটি গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বের করার জন্য কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য বহুমুখী পথ রয়েছে। সব কটি পথই কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যালোচনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমানতের ওপর আরোপিত সুদের মতো করে ঋণের ওপর আরোপিত সুদের হিসাব করার বিষয়টি ভাবতে হবে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর ছয় মাস পরপর সুদ আরোপ করে। কিন্তু ঋণের ওপর করে তিন মাস পরপর। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের মতো ঋণের ওপরও ছয় মাস পরপর সুদ আরোপের পদ্ধতি চালু করতে চায়।

কমিটির একজন সদস্য বলেন, ঋণের সুদ হিসাবের ক্ষেত্রে নানা ধরনের শুভংকরের ফাঁকির বিষয় খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেগুলো শনাক্ত করে কার্যকর উদ্যোগ নিলে সুদের হার দেড় থেকে আড়াই শতাংশ কমানো সম্ভব হবে।

এ ছাড়াও ওই কমিটিকে ঋণের ওপর আরোপিত চক্রবৃদ্ধি সুদ ত্রৈমাসিকের পরিবর্তে ৬ মাস পরপর হিসাব করার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা আছে কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখার জন্য গভর্নর পরামর্র্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কী ধরনের চক্রবৃদ্ধি বা সরল সুদহার ব্যবহƒত হচ্ছে, তাও পরীক্ষা করে দেখার জন্য বলা হয়েছে।

এর বাইরেও ওই কমিটি ঋণের বিভিন্ন বিষয় সহজ ও দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের ওপর সরল হারে সুদ আরোপের পক্ষে। কিন্তু ব্যাংকগুলো চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের পক্ষে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিদর্শনের সময় বিতর্ক দেখা দেয়। এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা বাড়তি সুদ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে। এর বেশি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না। ফলে ব্যাংকাররাও গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি সুদ আদায় থেকে বিরত থাকে না।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, সুদ আদায় পদ্ধতিতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলে ব্যাংকগুলো সেটা মেনে চলবে। নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন হিসাব পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদ আদায় করে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নীতিমালা করার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি খুবই ভালো। এর ফলে এ খাতে একটি দিকনির্দেশনা আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা প্রক্রিয়ায় ঋণের বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত সুদ আদায় করলেও বাস্তবে সুদ খাত থেকে তাদের আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। আগে এ খাত থেকেই ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি আয় হতো।

এ বিষয়ে সরকারি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলো বড় ঋণের বিপরীতে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের সুদ মওকুফ করে। যে কারণে সুদের হার বাড়লেও আদায়ের হার বাড়ছে না। ফলে যেসব ভালো গ্রাহক নিয়মিত সুদ পরিশোধ করে তাদের বিপাকে পড়তে হয়।

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য