উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে দুই মত

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

 আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপিতে দুই ধরনের মত তৈরি হয়েছে। তবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থান এবার জোরালো হচ্ছে। একই সঙ্গে আপাতত হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির বিপক্ষেও দলে শক্ত মত তৈরি হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির ভেতরে ভিন্নমত থাকলেও কঠোর কর্মসূচির বিপক্ষে প্রায় সবার অবস্থান এক।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই দুটি বিষয় নেতাকর্মীদের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও মনে করেন, স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে হলে এই দুই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যৎ কৌশল ঠিক করতে হবে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে দুই মত

কয়েক বছর ধরে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।

ফলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মনে করছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

গত ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, আসন্ন রমজানের আগে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। গত দুই দিনে বিএনপির ভেতরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে কয়েকজন কথা তুলেছেন। 

তবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার কৌশল খোঁজা উচিত। তৃণমূলের এই নির্বাচনে গেলে বিএনপির রাজনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। নির্বাচনে যাওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূল খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এখন শুধু সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে তাদের মনোবল চাঙ্গা করা যাবে না। কারচুপি হলেও নির্বাচন সব সময় উৎসবের আবহ তৈরি করে। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে হাজার হাজার নেতাকর্মী সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন।

অবশ্য দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা সঠিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা আবার প্রমাণিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আদলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে সরকার। ফলে নির্বাচনে গিয়ে তেমন লাভ হবে না। বরং এই নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে হামলা-মামলা আরো বাড়বে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সরকারের অধীনে যেখানে স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদরাসার নির্বাচনও সুষ্ঠু হয় না, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে কী হবে তা সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে।

অবশ্য বিএনপির কর্মকৌশল প্রণয়নে যুক্ত থাকেন এমন একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনবিমুখ দল রাজনীতিতে হারিয়ে যায়। এবার উপজেলা নির্বাচনে না গেলে যে ভুল হবে তা কাটিয়ে ওঠা বিএনপির জন্য কঠিন হবে।

বিএনপির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ পাল্টানো কঠিন। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে সব কূল রক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ, দলীয়ভাবে না গিয়ে নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। দল তাঁদের অনানুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা করবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তাতে অংশগ্রহণ করা উচিত কি না তা নিয়ে দলে আলোচনা হবে।

পরিস্থিতি তৈরি না হলে আপাতত শক্ত কর্মসূচি নয়

গত বুধবার রাতে বিএনপির পাঁচ ভাইস চেয়ারম্যান, একজন উপদেষ্টা এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে নেতাদের মতামত নেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, সব নেতাই সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলন অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিলেও আপাতত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির বিরুদ্ধে মত দেন। একই সঙ্গে আপাতত জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির প্রস্তাব দেন। আগামী রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাইস চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈঠকের মোদ্দা কথা হলো, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে এবং রমজানের আগে জোরদার কর্মসূচি দিতে হবে। তবে আপাতত এমন কর্মসূচি দিতে হবে যাতে নেতাকর্মীরা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া শুরু করেন।

বৈঠকে একজন নেতা বলেন, এখনো নেতাকর্মীরা মুক্তি পাননি। অনেক নেতাকর্মী পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। ফলে আদালত থেকে জামিন পেয়ে নেতাকর্মীদের মুক্ত করাটা এখন জরুরি। একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, রমজান সামনে রেখে কর্মসূচি দিতে হবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ দেওয়া ঠিক হবে না।

একজন নেতা সভা-সমাবেশের কর্মসূচির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে আসার আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে করেন তাঁরা। অপর একজন নেতা বলেন, এই মুহূর্তে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা না আসায় সবাই হতাশ। ফলে নেতাকর্মীদের কর্মসূচিমুখী করাটা চ্যালেঞ্জ হবে।

কূটনৈতিক অবস্থান ঠিক করতে হবে

বৈঠকে বিএনপির কূটনৈতিক অবস্থান ঠিক করার পরামর্শ দেন নেতারা। কারা বন্ধু, কারা শত্রু তা ঠিক করে একটি নীতি তৈরি করার পরামর্শ দেন তাঁরা। নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে ভারতবিরোধী যে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি তা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ভারতবিরোধী অবস্থান ধরে রেখে কূটনৈতিক কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।