উন্নয়নের কথা না বলে দোষ খুঁজলে, নমিনেশন পাবেন না

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রার্থী হতে গিয়ে যারা দলের উন্নয়নের কথা না বলে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের দোষ খুঁজে বের করবেন তাঁরা আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ শনিবার দুপুরে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত প্রার্থী হয়ে বিএনপি কি সন্ত্রাস করল, লুটপাট, দুর্নীতি করল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করল, সেটা বলে না। অথচ তাদের বক্তব্য এসে যায় আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে। আমি একটা ঘোষণা দিতে চাই- কেউ যদি আমার দলের উন্নয়নের কথাগুলো না বলে কোথায় কার কী দোষ আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে জনগণের কাছে গিয়ে বলেন, তারা আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। এটা পরিষ্কার। যিনি আমার দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবেন সে কি এটা বোঝেন না, এতে তাঁর ভোটও নষ্ট হবে। সে তাহলে কোনমুখে ভোট চাইতে যাবে।’

‘ওরা মধু খেতে আসে, থাকতে না’

দলে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা ক্ষমতায়, বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই ছুটে আসে দলে আসতে। গ্রুপ করার জন্য, কোনো বাছ-বিচার নাই। যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়েই নিজের শক্তি দেখাতে চায়। এরা আসে মধু খেতে। এরা আপনার সাথে থাকতে আসে না। আপনার সাথে কাজ করতে আসে না। আর আসে যারা ওই যে আগুনে পুড়িয়েছে, সন্ত্রাস করেছে, আমার নেতাকর্মীর ওপর হামলা করেছে, ঘরবাড়ি ভেঙেছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভাবে যে এখানে আসলে মামলা থেকে বাঁচতে পারবে। আর আসে কারা? যারা মনে করে যে ক্ষমতার সাথে থাকতে পারলেই তো পয়সা বাড়াতে পারব, তারা। একটা সার্ভে (জরিপ) সারা বাংলাদেশে আমরা করেছি যে কাদের কাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, কারা আমার দলে আছে। সেই তালিকা কিন্তু আমাদের কাছে আছে। কাজেই আমি বলব, কেউ যদি তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, এখনই তাদের বিদায় করেন। কারণ তারা দুঃসময়ে থাকবে না।’

‘জনগণ  কিন্তু খুব হিসেবি, মাথায় রাখতে হবে’

নিজের দলের সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রার্থী হবার অধিকার সকলেরই আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে আমার দলকে বদনামে ফেলবে, এটা কিন্তু কোনোমতেই আমি মেনে নেব না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। আর আমাদের যারা সংসদ সদস্য তাদেরকে আমি বলব, যে একটা কথা মনে রাইখেন, জনগণ কিন্তু খুব হিসেবি। কেউ দুর্নীতি করলে জনগণ কিন্তু সেটা ঠিকই মাথায় রাখে, সেটা কিন্তু ভুলে যায় না। ওই কাজ করতে যেয়ে টাকা নিলে, এরপর ভোট চাইতে গেলে বলবে, যে টাকা দিয়ে কাজ নিছি, ভোট দিব কেন। কে নমিনেশন পাবেন, কে পাবেন না, সেটা নির্ভর করে, আপনার এলাকায় আপনারা কারা কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন, আর আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কতটুকু মূল্যায়ন করেছেন, সেটাও কিন্তু আমি বিবেচনা করব।’

‘যাকে প্রার্থী করব, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি, যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, সেইভাবে কেউ জয়ী হতে পারবেন না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে আপনাকে আপনার কাজে ভোট দিবে, তাকে আমি প্রার্থী করব, সেইভাবেই ভোট হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ কিন্তু ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। কাজেই আমি এইটুকু বলব, যে আমরা এই বদনাম নিতে চাই না। যাকে আমরা নির্বাচনে প্রার্থী করব, তার পক্ষে সকলকে কাজ করতে হবে।’

‘আগামী নির্বাচন বেশি চ্যালেঞ্জিং’

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বেশি চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন। সবসময় মনে রাখতে হবে, এটা আমাদের একটানা তৃতীয় নির্বাচন। আর নির্বাচন মানেই সেটা চ্যালেঞ্জিং হবে এবং এই নির্বাচনে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সময় কিন্তু আর বেশি নাই।’

ক্ষুদে বার্তা দেখে সমস্যার সমাধান করেন প্রধানমন্ত্রী

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তাঁর মোবাইল ফোনে দিনে তিন-চারশ এসএমএস আসে এবং সময় পেলেই তিনি প্রতিটি বার্তা পড়েন। এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন বলেও তিনি জানান।

আগামীতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ইঙ্গিত

প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ‘আমরা জোট করেছি মহাজোট করেছি। নির্বাচনের স্বার্থে জোট করতে হয়। আমরাও করব, আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই করতে চাই। তবে, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায়িত্বটা অনেক বেশি। আওয়ামী লীগ এদেশের সব থেকে বড় দল। তাঁর জনসমর্থন সব থেকে বেশি সেটা মাথায় রেখেই, যাকে আমরা নৌকা মার্কা দেব, যাকে আমরা নির্বাচনে প্রার্থী করব তার পক্ষে সকলকে কাজ করতে হবে।’

প্রায় দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনসহ সব গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গৌরবদীপ্ত অতীতের স্মৃতিচারণ করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ দিনটিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাগত ভাষণ দেন। এর আগে দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন।

সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম, কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।