ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণ মামলা যুক্তিতর্ক শুরু আজ

নিজম্ব প্রতিবেদক:

ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত শেখ হাসিনার ট্রেন বহরে গুলিবর্ষণ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আদালত সূত্র জানিয়েছে যুক্তিতর্ক শেষ হলে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলীর উপস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তার আদালতে এই যুক্তিতর্ক শুরু হবে।

ইতোপূর্বে এই মামলার আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বহুল আলোচিত এই মামলার সাফাই সাক্ষ্য প্রদানকারী ও মামলার আসামিদের সঙ্গে কথা বলে এবং পাবনা আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে রেলপথে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংসন স্টেশনে তাকে বহনকারী ট্রেনবহর যাত্রাবিরতি করলে অতর্কিত ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে ট্রেনবহরে হামলা চালায় তৎকালীন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ঈশ্বরদীতে দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা সেদিন দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর মামলাটি পুনঃতদন্ত করে পুলিশ। তদন্ত শেষে নতুনভাবে ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এই মামলার আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করার বছরে এই মামলায় পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্টও দাখিল করে, কিন্তু আদালত সে রিপোর্ট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে প্রেরণ করে।

১৯৯৬ সালের দিকে সিআইডি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। প্রথম দায়ের করা ৭ জনের বাইরে এ মামলায় যাদের নতুনভাবে আসামি করা হয় তারা হলেন ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মকলেছুর রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র শামসুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বিশ্বাস, পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি কেএম আক্তারুজ্জামান আক্তার, পাকশীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সাহাপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, রেজাউল করিম শাহীন, আজিজুর রহমান শাহীন, সেলিম আহমেদ, পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, বিএনপি নেতা ইসলাম হোসেন জুয়েল, শহীদুল ইসলাম অটল, আবদুল জব্বার প্রমুখ।

আসামিদের মধ্যে গত ২৫ বছরে ওসিয়া, আলী আজগর, খোকন, তুহিন ও আলমগীরসহ ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এদিকে মামলাটির আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বাদী পক্ষের একজন আদালত পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে মিস কেস করলে সেসময় মামলাটি কিছু বিলম্বিত হয়। আবেদনের শুনানি শেষে পাবনা জেলা জজ পুনরায় মামলাটি ওই আদালতেই নিস্পত্তির জন্য ফেরত পাঠান। গত ২৫ বছরেও আলোচিত এ মামলার নিস্পত্তি হয়নি। এত বছর পরেও মামলাটি শেষ না হওয়ায় স্থানীয়ভাবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দু’দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বাদী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামি পক্ষের ৫৬ জনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ থেকে শুরু হওয়া যুক্তিতর্ক শেষে যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। গতকাল সোমবার বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে, যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে-এজন্য এই মামলার আসামিরা ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুর্ভাবনায় রয়েছেন।

 

 

স/আ