ঈদের আনন্দমাখা আলোকময় দিনগুলো

পৃথিবীতে যা শ্রেষ্ঠতর তা সবাই অধির আগ্রহে পেতে চায়। এই যেমন শাওয়াল মসের এক তারিখে পশ্চিম আকাশে উদিত বাঁকানো চাঁদ। এটি কার কাছে না প্রিয়! আমার মনে হয় ইহা সবার কাছেই প্রিয়। কেননা এই চাঁদ প্রতিটি মানুষের ঘরে খুশির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। পৃথিবীর সমগ্র মুসলীম উম্মাহকে একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে।

পশ্চিম আকাশে উকি দেয়া এই চাঁদটি শুরু করে নতুন একটি ঈদের যাত্রা। কারো কাছে এ মহুর্তটি চাঁদ ঈদ বা চাঁন্দা ঈদ নামে পরিচিত। ছোট বেলায় বাবা-চাচার কাঁধে উঠে পশ্চিম আকাশে একপলক এই বিশেষ চাঁদটিকে দেখবার জন্য তাকিয়ে থাকতাম । এমন সময় মেঘপুঞ্জ ভীষণ ঝামেলা করতো।

একটু পরপর মেঘপুঞ্জের দল আমাদের প্রখর দৃষ্টির সামনে এসে আকাশে ঘনকালো আবহ তৈরী করতো। এতে কখনো কখনো বিরক্ত হতাম। আবার কখনো এই বিরক্তির সাথে আমাদের চাঁদ দেখার আকাঙ্খা আরো বেড়ে যেত। বাড়ির উঠান থেকে চাঁদ দেখেতে না পেলে সবাই মিলে হই-হই-রই-রই করে অবারিত বিল-পাঁতারে দৌড়ে যেতাম। আমাদের দলের মধ্যে থেকে অনেকে দুষ্টামি করে বলতাম ওই যে চাঁদ! ওই গাছের ওপর দিয়ে দেখ! আমি সবার আগে দেখেছি!

কিন্তু আসলে তা নয়! কখনো যদি সত্যিই কেউ একবার দেখতে পেতাম তবে আনন্দের সীমা থাকতো না। আতশবাজী করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উদ্যাপন করতাম। অনেক চেষ্টার পর চাঁদ দেখতে না পেলে সঙ্গে রাখা বেতার-টেলিভিশনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘোষণা মোতাবেক নজরুলের সেই বিখ্যাত গান “রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…” শুনে নাচতে নাচতে ঘরে ফিরে যেতাম।

ছোটবেলায় গ্রামে বসে গ্রামের আকাশে চাঁদ দেখতাম। এখন শহরে বাস করি। বিশাল বিশাল অট্টালিকা ঘেরা বাড়ির ছাদে বসে চাঁদ দেখি। এও তো কম আনন্দের নয়! তখন বাবা-চাচার কাঁধে উঠে চাঁদ দেখতাম। এখন ভাস্তে-ভাতিজি, ভাগ্নে-ভাগিনীদের কাঁধে তুলে নিয়ে চাঁদ দেখি। চাঁদ দেখায়। প্রতিটি মহুর্তে শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সবাই মিলে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায়।

জীবনের প্রতিটি বছরই ভিন্ন স্বাদে, ভিন্ন রঙে দেখেছি সব ঈদ। দিন যত বাড়ছে ঈদের আনন্দ উপকরণের বেশ পরিবর্তনও হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে মানুষ কর্মমুখী হয়। বন্ধ কারখানা নতুন রূপে চালু করা হয়। কাজের মাধ্যমে আয় উপার্জনের জন্য মানুষ শহরমুখী হয়। অর্থনীতি সচল হয়। বাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বেড়ে যায়। সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার অধিক তৎপর হয়।

প্রিয়জনের সাথে ভালোবাসা ভাগাভাগি করতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে মানুষ নিজ জন্মভূমিতে ছুটে আসে। নতুন পোষাক কিনে পরিধান করে সারা বছরের গ্লানি ভুলে যায়। ঈদের দিনে পোলাও-কোরমা পাতে ধনী-গরীব সবাই আনন্দে মেতে উঠে। পৃথিবী সাজ সাজ রূপে ‘মানব সুখের পরম শান্তির গহনা’ পরে নেচে উঠে।

রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশের নানাস্তরের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেন। টিভি চ্যানেলে দেশজ সংস্কৃতির নানামাত্রিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। ঈদকে সমানে রেখে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হাজারো রকমের অফারের সমাহার ঘটে। পরিচিত জনেরা একে অপরের কাছে ‘শুভ কামনা’ জ্ঞাপক বার্তা পাঠায়। এদিন পরিবারের সকল সদস্য খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে। নিজেদের গোসল সেরে নতুন কাপড় পরে।

ছোটরা বড়দের কাছে ‘আশির্বাদ ও সেলামী’ গ্রহণ করে। বড়রা ছোটদের মিষ্টি মধুর ভালোবাসায় অভিভূত হয়। সামর্থ্যবানরা বাড়িতে আলোকসজ্জা করে আনন্দের বাড়তি খোরাক জোগায়। বাড়ীঘর নতুন সাজে সজ্জিত হয়। ঈদকে অনুষঙ্গ করে কবিরা কবিতা লিখেন। কথা সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনা করেন। একজন মানুষ। একজন সৃষ্টিশীল কর্মমুখী পরিশ্রমী মানুষের জীবনে ঈদের গুরত্বের শেষ নেই। ঈদ বয়ে আনুক পৃথিবীর বুকে ও মানুষের হৃদয়ে অনাবিল সুখ ও শান্তি। সবাইকে ঈদ মোবারক।

 

 

লেখক: মো. আবদুল কুদ্দুস শিক্ষক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ
ও সহকারী প্রক্টর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী,