ই-মেইল বিতর্কে পেছাচ্ছেন হিলারি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র আট দিন। ভোটের আগমুহৃর্তে নতুন করে নিজের ই-মেইল বিতর্কে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

 

এই পরিস্থিতি পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এত দিন বিভিন্ন জরিপে পিছিয়ে থাকা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দিন আগে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই হিলারির ই-মেইল বিতর্কের বিষয়টি নতুন করে তদন্ত শুরুর যে ঘোষণা দিয়েছে, এর প্রভাব পড়ছে ভোটের ময়দানেও। কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা কমেছে। আগের চেয়ে কিছুটা পিছিয়েছেন হিলারি, কিছুটা এগিয়েছেন ট্রাম্প।

 

গতকাল রবিবার বিবিসির এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি। টাম্প যেখানে ৪৬ শতাংশ, সেখানে হিলারির পক্ষে রয়েছে ৪৯ শতাংশের সমর্থন। অথচ ২৪ অক্টোবর পরিচালিত জরিপে হিলারির পক্ষে ছিল ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের পক্ষে ছিল ৪৫ শতাংশ।

 

শনিবার এবিসি/ওয়াশিংটন পোস্ট পরিচালিত অন্য এক জনমত জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৭ শতাংশ আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৫ শতাংশ সমর্থন দেয়। অথচ এক সপ্তাহ আগে একই পদ্ধতিতে চালানো জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ১২ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন হিলারি। অন্যদিকে আরসিপি পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা গেছে, হিলারিকে ৪৪.৯ শতাংশ এবং ট্রাম্পকে ৪১.১ শতাংশ সমর্থন দিয়েছে। সিএনএনের জরিপ বলছে, হিলারিকে ৪৭ শতাংশ ও ট্রাম্পকে ৪২ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছে; এই জরিপে বলা হচ্ছে, গত দুই দিনে ট্রাম্প ১ পয়েন্ট এগিয়েছেন। ইনডিপেন্ডেন্টের এক জরিপ বলছে, আগাম ভোটের বুথফেরত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে অন্তত ১৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি।

 

এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি শুক্রবার দেশটির কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় হিলারি ক্লিনটন ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। সেখানে কোনো ‘গোপনীয়’ তথ্য চালাচালি করেছিলেন কি না তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছেন। এফবিআই পরিচালকের দাবি, নতুন এই তদন্তের বিষয়ে জানানোটা তিনি নৈতিকতাবোধ থেকে করছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে আমি ভুল পথে পরিচালিত করতে চাই না।’

 

নতুন করে শুরু করা তদন্তের তথ্য নির্বাচনের সময় কংগ্রেসকে না জানাতে এফবিআইকে পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো নির্বাচনে অকারণে হস্তক্ষেপ আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রে যে আইন প্রচলিত আছে, তা এফবিআইয়ের নতুন এ উদ্যোগের সঙ্গে অসংগত।

 

আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগমুহৃর্তে এফবিআই এ উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে একে ‘নজিরবিহীন ও গভীর সংকটের’ বলে উল্লেখ করেছেন হিলারি। শনিবার ফ্লোরিডায় এক প্রচারসভায় হিলারি বলেন, ‘যতই তদন্ত হোক, খারাপ কিছু পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই সময় কেন এই তদন্ত, এর ব্যাখ্যা সঠিকভাবে এফবিআইকে দিতে হবে। একই সঙ্গে সবকিছু জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ ঘটনা ভোটের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না, এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হিলারি।

 

হিলারির প্রচার শিবির থেকে এফবিআইয়ের এ উদ্যোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা হিলারিকে ঠেকানোর জন্য এবং ট্রাম্পকে সহযোগিতা করার জন্যই এফবিআই এ উদ্যোগ নিয়েছে।

 

একই দিন এফবিআইয়ের প্রশংসা করে কলোরাডোতে এক প্রচারসভায় ট্রাম্প আবারও বলেছেন, মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পরই হিলারির ই-মেইলের বিষয়টি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। রাষ্ট্রীয় কাজে হিলারির ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করাটা ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর (হিলারি) হাতে রাষ্ট্র কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না। বিচার বিভাগের প্রতি অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বলেন, ‘বিচার বিভাগ হিলারি ক্লিনটনের অপরাধ কর্মকাণ্ড আড়াল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

 

নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে বলে শুরু থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন ট্রাম্প। অথচ তাঁর এক সমর্থকই দুইবার ভোট দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। শনিবার আইওয়া অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট শুরু হয়েছে। সেখানে নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার টেরি লিন রোট প্রথম দফা কাউন্টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। এরপর দ্বিতীয় দফা ভোট দিতে যান কাউন্টির ভ্রাম্যমাণ একটি ভোটকেন্দ্রে। এ সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পাঁচ হাজার ডলার জামানত দিয়ে তিনি জামিনে মুক্তি পান। আগামী ৭ নভেম্বর তাঁকে আবার আদালতে হাজিরা দিতে হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর অন্তত পাঁচ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

 

বাড়ি নিয়ে ঝামেলায় হিলারি : হিলারি ক্লিনটন শহর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে তাঁর বাড়ি মেরামত ও পুনর্বিন্যাসের কাজ করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তোলার পর তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে। এ জন্য অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সংস্কারকাজ বন্ধ রাখতে শহর কর্তৃপক্ষ হিলারিকে নির্দেশ দিয়েছে।

 

নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল এলাকা উয়েস্টচেস্টারের চাপাকুয়াতে গত গ্রীষ্মে ১৬ লাখ ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন ক্লিনটন দম্পতি। চলতি মাসের প্রথম দিকে ওই বাড়ির গাছ কাটার বিষয়টি নজরে এলে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে এলাকাবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, সমস্যা আরো গভীরে। ভবন পরিদর্শক দেখতে পান, অনুমতি না নিয়ে বাড়িটি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। রান্নাঘরকে করা হয়েছে আধুনিকায়ন। নতুন করে হিটিং ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ির কাঠামো পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে একটি সুইমিং পুলও। গত আগস্ট মাস থেকে শুরু হওয়া এসব কাজের জন্য শহর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

 

শহরের ভবন পরিদর্শক উইলিয়াম মাসকিল প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। মাসকিল তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন, ভবন নির্মাণে বেশ কিছু নিয়মনীতি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ১৭ অক্টোবর বাড়ির মালিককে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২১ অক্টোবর পুনরায় পরিদর্শনে গিয়ে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো