ই-বর্জ্য উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচে ভারত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার ভারত। দেশটির সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ ও ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে ভারত সরকার যখন প্রযুক্তির দিক থেকে দেশকে উন্নত করতে জোর দিচ্ছে; তখন দেখা যাচ্ছে, ই-বর্জ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ঢুকে পড়েছে ভারত। এরই মধ্যে ই-বর্জ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় নাম উঠে এসেছে ভারতের। গত মঙ্গলবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঠিক আগের দিন অ্যাসোচেম-এনইসি প্রকাশিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর জি নিউজ।

অ্যাসোচেম-এনইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে চীন, জাপান, আমেরিকা ও জার্মানিও রয়েছে। গত সোমবার এ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উত্কর্ষের সঙ্গে সঙ্গে নানা ইলেকট্রনিকস পণ্য মানুষের নিত্যব্যবহারের সঙ্গী হয়ে উঠছে। ডিজিটাল এবং উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর ডিভাইস যেমন— মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, স্মার্টটিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মতো পণ্য জীবনকে অনেক সহজ করেছে। কিন্তু এসব ডিভাইস ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষ হলে ফেলে দেয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ই-বর্জ্য পরিবেশ ও মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

অ্যাসোচেম-এনইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। যার পরিমাণ ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ সেখানে বছরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা রিসাইক্লিং করা হয় মাত্র ৪৭ হাজার ৮১০ টন। দেশটিতে মোট ই-বর্জ্যের ১৩ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। রাজ্যটিতে বছরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয় ৫২ হাজার ৪২৭ টন ই-বর্জ্য। দেশটির উত্তর প্রদেশ থেকে উৎপাদন হচ্ছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ ই-বর্জ্য। রাজ্যটিতে প্রতি বছর পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হয় মাত্র ৮৬ হাজার ১৩০ টন ই-বর্জ্য। ভারতে মোট ই-বর্জ্যের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এছাড়া দেশটিতে উৎপাদিত মোট ই-বর্জ্যের ৯ দশমিক ৫ শতাংশ দিল্লি, ৮ দশমিক ৯ শতাংশ কর্ণাটক, ৮ দশমিক ৮ শতাংশ গুজরাট এবং ৭ দশমিক ৬ শতাংশ মধ্য প্রদেশ থেকে উৎপাদন হচ্ছে।

অ্যাসোচেমের তথ্যমতে, ভারতে প্রতি বছর ২০ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে রিসাইক্লিং করা হচ্ছে মাত্র ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫ টন। কর্ণাটক রাজ্যে ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করতে ৫৭টি ইউনিট রয়েছে। যেখান থেকে ৪৪ হাজার ৬২০ টন ই-বর্জ্য প্রতি বছর পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব। মহারাষ্ট্রের ৩২টি ইউনিটের ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ক্ষমতা ৪৭ হাজার ৮১০ টন। উত্তর প্রদেশে রয়েছে ২২টি ইউনিট। রাজ্যটিতে প্রতি বছর ৮৬ হাজার ১৩০ টন ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব। দেশটির হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, গুজরাট, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে রিসাইক্লিং ইউনিট রয়েছে যথাক্রমে ১৬, ১৪, ১২, ১০ ও ৪টি। এসব রিসাইক্লিং ইউনিট থেকে প্রতি বছর যথাক্রমে ৪৯ হাজার ৯৮১, ৫২ হাজার ৪২৭, ৩৭ হাজার ২৬২, ৬৮ হাজার ৬৭০ এবং ১১ হাজার ৮০০ টন ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হচ্ছে।

বিভিন্ন রাজ্য থেকে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে— কম্পিউটার মনিটর, মাদারবোর্ড, ক্যাথোড রে টিউব, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, মোবাইল ফোন ও চার্জার, সিডি, হেডফোন, এলসিডি, এসি, ফ্রিজসহ আরো কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব পণ্য থেকে বাতাসে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের দূষণ থেকে ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস, হার্ট, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

অ্যাসোচেমের তথ্যমতে, ভারত থেকে উৎপাদিত মোট ই-বর্জ্যের মাত্র ৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হচ্ছে। দুর্বল অবকাঠামো, আইন ও ফ্রেমওয়ার্কের ঘাটতির কারণে বেশির ভাগ ই-বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। এ কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে এবং পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। দেশটি থেকে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের ৯৫ শতাংশই অসংগঠিত খাতের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে।