ইসলামিক ফ্রন্ট’ নিয়ে ১৪ দলীয় জোটে অসন্তোষ!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’-এর যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, ১৪ দলীয় জোট গড়ে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্বের চেতনার বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ইসলামিক ফ্রন্টের আদর্শিক কোনও মিল নেই। বরং একাধিক বিষয়ে রয়েছে বৈপরীত্য। ১৪ দলীয় জোটের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের এমন মনোভাব জানা গেছে।

ইসলামিক ফ্রন্টের ওয়েবসাইটে দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ইসলামিক ফ্রন্ট ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েমে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক অপ্রতিরোধ্য কাফেলা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা ও আদর্শ ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন, সব ধরনের গোমরাহি থেকে ঈমান রক্ষার এক সুরক্ষিত দুর্গ, চরিত্রবান নির্ভীক সমাজকর্মী ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির এক উন্নত আদর্শিক প্রতিষ্ঠান। এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ১৪ দলীয় জোটের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের নেতারা।

বিষয়টি নিয়ে ১৪ দলীয় জোটে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই জোটের বৈঠকে ডেকে ইসলামিক ফ্রন্টকে তাদের গঠনতন্ত্র, সংবিধান জমা দেওয়ার কথা বলা  হলেও তারা জমা দিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান ও গঠনতন্ত্রের ছাপা কপি শেষ।

১৪ দলীয় জোটের একাধিক সূত্র জানায়, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে, এর সঙ্গে ইসলামিক ফ্রন্টের সম্পর্ক একেবারেই নেই। ক্ষমতাসীন দলের কোনও কোনও নেতার সঙ্গে ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশে’র নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনকারী জোটে দলটিকে দেখতে চায় না জোটের শরিক দলগুলো। এ নিয়ে জোটের সর্বশেষ বৈঠকেও কয়েকটি দল আপত্তি তোলে। ফলে ক্ষমতাসীন জোটে ইসলামিক ফ্রন্টের  যোগ দেওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘‘১৪ দলীয় জোটে ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’-এর যোগ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের জোট আদর্শিক। এখানে আসতে হলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক হতে হবে। ইসলামিক রাষ্ট্র ও সমাজ কায়েমের কথা বললে তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে না।’’

১৪ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৪ জুন) ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টায়। এই বৈঠকেই ফ্রন্টের বিষয়ে আলোচনা হবে।

এর আগের বৈঠকে জোটের একাধিক শরিক দল ফ্রন্টের যোগ দেওয়ার বিষয়ে সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের কাছে আপত্তি জানান। এ কারণেই গত বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য গেলেও ফ্রন্টের নেতাদের ফিরে আসতে হয়। ওই সময় তারা মোহাম্মদ নাসিমের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের ছবি দেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বৈঠকে ইসলামিক ফ্রন্ট ১৪ দলীয় জোটে আসতে চায়। এ ব্যাপারে শরিকদের অভিমত জানতে চান মোহাম্মদ নাসিম। বৈঠকে বিভিন্ন মত পাওয়া গেলে জোটে নেওয়ার ব্যাপারটি থেকে পিছিয়ে আসেন সবাই। পরে মোহাম্মদ নাসিম ইসলামিক ফ্রন্টের নেতাদের ডেকে গঠনতন্ত্র ও সংবিধান চেয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জোট সূত্র আরও জানায়, ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর সম্পর্ক ভালো থাকায় জোটের শরিকরা সরাসরি ফ্রন্টের বিরোধিতা থেকে বিরত রয়েছেন।

তবে নেতারা বলছেন, ‘ফ্রন্টের দলীয় আদর্শ হচ্ছে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই  দলটি জোটে শরিক হলে জোটের গায়ে সাম্প্রদায়িক দাগ লাগতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। একবার আমাদের ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে নাসিম সাহেব পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছেন। তবে জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ঈদের পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আমাদের গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী আমরা ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে কাজ করব।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন