ইসকন: ঢাকায় রাধাকান্ত জিউ মন্দিরে কথিত হামলায় আসলে কী ঘটেছে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

রাধাকান্ত মন্দিরের সীমানা প্রাচীরের এই অংশটি ভাঙা হয়। বাংলাদেশে পুরোনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় একটি ইসকন মন্দিরে একদল দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়ে সীমানা প্রাচীরের একটা অংশ ভেঙেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাধাকান্ত জিউ ইসকন মন্দির নামের এই মন্দিরের পুরোহিত অমানি কৃষ্ণ দাশ অভিযোগ করেছেন, দুস্কৃতকারীরা আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভাঙার সময় প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুরোহিতের দু’জন সহকারী আহত হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলা হয়েছে।

হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, মন্দিরের জমি নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে বিরোধ থেকে এই হামলা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় পুলিশ বলছে, হামলার অভিযোগ সঠিক নয়। জমির মালিকানা দাবিদার একটি পক্ষ সেখানে সংস্কার কাজ করার সময় পুরোনো দেয়াল ভেঙে পড়েছে।

তবে হামলার অভিযোগ ওঠার পর মন্দিরটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরোনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় লালমোহন সাহা স্ট্রিটে সাড়ে ১৬ কাঠা জায়গা নিয়ে এই মন্দির। এটি প্রায় দু’শো বছরের পুরোনো মন্দির বলে দাবি করছে এর কর্তৃপক্ষ।

তবে মন্দিরটিতে বৃহস্পতিবার আসলে কী ঘটেছে, সেই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত অমানি কৃষ্ণ দাশ বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর শ’দুয়েক লোক এসে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং মন্দিরের পুরোহিতের দু’জন সদস্য প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা তাদেরও আক্রমণ করে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সীমানা প্রাচীর ভাঙার পর হামলাকারীরা মন্দির চত্বরে ঢুকে সেখানে থাকা একটি মূর্তি এবং নির্মাণ কাজের কিছু লোহার রড নিয়ে যায়। কিন্তু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি দল আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মন্দিরটির সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ ভাঙা ছাড়া মূর্তি নেয়া বা লুটপাটের কোন তথ্য পায়নি।

ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ তাদের সংগঠনের ঐ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেছেন, সেখানে পরিদর্শন করে তারা শুধু দেখতে পেয়েছেন যে মন্দিরটির প্রাচীন জরাজীর্ণ সীমানা দেয়ালের একটা অংশ হামলাকারীরা ভেঙেছে। সে সময় বাধা দিতে গিয়ে পুরোহিতের দু’জন সহকারী আহত হয়েছেন।

এছাড়া মন্দিরের ভেতরে হামলাকারীদের অন্য কোন অঘটন ঘটানোর কোন তথ্য তারা পাননি। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, সে ব্যাপারে অবশ্য সবপক্ষই জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলেছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি মন্দিরের জায়গার একটি অংশের মালিকানা দাবি করে আসছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এনিয়ে পুরোনো মামলাও রয়েছে নিস্পত্তির অপেক্ষায়।

তিনি উল্লেখ করেন, জমির মালিকানা দাবিদার সেই ব্যক্তির লোকজন হামলা করে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভেঙে জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।

মন্দিরটির পুরোহিত অমানি কৃষ্ণ দাশও জমি নিয়ে বিরোধের ব্যাপারে একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু মন্দিরের ভেতরে কোন হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে স্থানীয় পুলিশ।

ওয়ারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেছেন, মন্দিরে হামলার অভিযোগ সঠিক নয়। এই দাবির সমর্থনে তিনি বলেন, মন্দির যে জায়গায় তার পাশে ভিন্ন হোল্ডিং নাম্বারের আরেকটি জায়গা আছে। হাজী সফিউল্লাহ নামের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ঐ জায়গার মালিকানা দাবি করেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সেই ব্যক্তির লোকজন ধসে পড়া প্রাচীন দেয়ালের কাছে সংস্কার করার সময় কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ ওয়ারী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনার ব্যাপারে মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেছে।

এই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন ওয়ারি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মন্দিরের জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি এবং হামলার অভিযোগ যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠেছে, তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

টুইটারে মন্দিরে হামলার খবর। ওদিকে এই কথিত হামলার বিষয়ে টুইটারে এক পোস্ট ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দুস হ্যান্ডেল থেকে সেই পোস্টে বলা হয়, মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে এবং হামলা করা হয় বৃহস্পতিবার শবেবরাতের রাতে। এর ওপর ভিত্তি করে ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার রাতে শবেবরাত উদাযপন হয়নি। এছাড়া মন্দিরের ভেতরে প্রতিমা ভাঙচুর কিংবা লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। সব পক্ষই বলেছে, ধর্মীয় চিন্তা থেকে নয়। জমি নিয়ে বিরোধ থেকে মন্দিরের সীমানা প্রাচীরের একটা অংশ ভাঙার ঘটনাটি ঘটেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা