‘ইতিহাসের পাতায় বরণীয় হয়ে থাকবেন মমতা’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বরাবরই তিনি সুবক্তা হিসেবে পরিচিত৷ বৃহস্পতিবারও ফের সেই ধারা বজায় রাখলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা অধুনা তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য মানসরঞ্জন ভুঁইয়া৷ মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা মৃগেন মাইতি, দীনেন রায়, অজিত মাইতিদের ছাপিয়ে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে মানসবাবুর গদগদ বার্তা, ‘‘এই ৭ বছরে আপনি রাজ্যের জন্য যা কাজ করেছেন, তাতে ইতিহাসের পাতায় আপনি শুধু স্মরণীয় নয়, বরণীয় হয়ে থাকবেন!’’

গত বিধানসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং বিধানসভা কেন্দ্রে মানসবাবু কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের প্রার্থী ছিলেন৷ এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছিল তাঁর নামে৷ সে’সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে, তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে বাছা বাছা শব্দচয়নে আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে৷

রাজনৈতিক মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে: মঙ্গলকোটে যখন সিপিএমের হামলার মুখে পড়েছিলেন মানসবাবু, তখন একহাতে ধুতির কোঁচা অন্যহাতে কানে ফোন নিয়ে ধান খেতের মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানসরঞ্জন ভুঁইয়াকে৷ সেসময় দৌড়তে দৌড়তেই রাজ্যের তৎকালীন দোর্দন্ডপ্রতাপ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ফোন করে প্রাণে বাঁচানোর কাতর আর্জি জানিয়েছিলেন মানসবাবু৷ টেলিভিশন চ্যানেলে ধান খেতের মধ্যে দিয়ে মানসবাবুর দৌড়ানোর সেই বিখ্যাত ছবি সামনে আসতে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷

অতীতে সিপিএমের সঙ্গে সখ্যতার জেরে বারেবারেই তাঁকে ‘তরমুজ’ (বাইরেটা সবুজ, ভেতরটা লাল) বলে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলকোটের ঘটনার পর তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা কটাক্ষের সুরে মানসবাবুর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘বিপদে পড়লে মানুষ কার শরনাপন্ন হন? ভগবানের! মানসবাবু বিপদে পড়ে বুদ্ধবাবুর শরনাপন্ন হয়েছিলেন৷ এর থেকেই যা বোঝার বুঝে নিন!’’

পালাবদলের বাংলায় ১৬-র অক্টোবরে সেই মানসবাবু জার্সি বদলে তৃণমূলে৷ উপহার স্বরূপ সবংয়ের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ককে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন দলনেত্রী৷ এমনকি তাঁর ফেলে আসা আসনে দলের অন্য কাউকে নয়, টিকিট দেওয়া হয়েছে স্বয়ং তাঁর সহধর্মিনী গীতারানি ভুঁইয়াকে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিধায়ক গীতাদেবীর আর্জি, ‘‘আপনার আর্শীবাদ চাই৷’’ মমতা জানান, ‘‘তোমাদের সবংয়ে আমি একটা হাসপাতাল গড়ে দেব৷’’ ফি-বারই কেলেঘাই-কপালেশ্বরীর জলে ভাসে সবং-পিংলা৷ এদিন মানসবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারের ৭৫ ভাগ অর্থ দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের৷ কিন্তু গত ২ বছর ধরে ওরা কোনও টাকা দিচ্ছে না৷ তবু রাজ্যের দৌলতে কাজ এগোচ্ছে৷’’

শুনে দৃশ্যতই খুশী হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে৷ প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা ভাল পয়েন্ট৷ মানস’দা আপনি রাজ্যসভায় বিষয়টা তুলুন৷ মানুষ জানুক কেন্দ্র কতটা জনবিরোধী৷’’ বৈঠকে হাজির তৃণমূলের এক নেতার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘লোকটার (মানস) এলেম আছে মানতে হবে৷ আমরা দিদিমণিকে শুধু প্রণাম জানিয়েই থেমে গেলাম৷ উনি স্মরণীয়, বরণীয় বলে আমাদের ছাপিয়ে গিয়ে দিদিমণির জয় করে নিলেন৷’’ ওই নেতার আরও সংযোজন, ‘‘এমন গদগদ প্রশংসা শুনলে কেউ বা খুশী না হয়ে থাকতে পারে!’’

Kolkata24x7