ইতালিতে ২৫ মদ্যপের হাত থেকে তরুণীকে রক্ষা করলেন বাংলার সাহসী আলমগীর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশি প্রবাসী হোসেইন আলমগীর না থাকলে ইতালির রাস্তা থেকে ২৫ মদ্যপ গায়া গুরনোত্তা (২৫) নামের ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যেতো। মূলত তার সাহসিকতার কারণে সেদিন গায়া উদ্ধার হন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক রোজেলা কোন্তে।

উল্লেখ্য, ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে গত ১৪ অক্টোবর রাতে ২৫ জন মাতালের যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারতেন গায়া গুরনোত্তা। ব্যক্তিগতভাবে হতাশ হয়ে রাতে পথে পথে ঘুরছিলেন গায়া। তবে হোসেইন ঝুঁকি নিয়ে গায়াকে উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয় সাংবাদিক রোজেলা কোন্তে তার সাহসিকতা নিয়ে সেখানের লা নাজিওনে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন।

ওইদিনের ঘটনা জানতে যোগাযোগ করা হলে রোজেলা কোন্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলমগীর সেই লোক, যিনি এতগুলো মদ্যপের হাত থেকে সেই নারীকে বাঁচিয়েছিলেন।’

পরে রোজেলার মাধ্যমে টেলিফোনে কথা হয় হোসেইন আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ফ্লোরেন্স শহরে একশ বাঙালি আমার কাছ থেকে ফুল নিয়ে রাতে রাস্তায় বিক্রি করেন। আমি প্রতিরাতের মতো ওই রাতেও সব তদারকি করছিলাম। হঠাৎ রাস্তার ধারে এক তরুণীকে বসে কাঁদতে দেখলাম। পরে পাশে গিয়ে কী হয়েছে ও কোন দেশি তা জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরে তরুণী ইতালীয় বলে জানালে আমি চলে যাই। দশ মিনিট পর সেখানে ফিরে এসে দেখি ২০/২৫ জন মদ্যপ ছেলে তাকে নিয়ে বিশ্রীভাবে টানাটানি করছে। তারা গালাগালিও দিচ্ছিল। আমাকে দেখেই ১০/১২ জন পালিয়ে যায়। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আমি মেয়েটিকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে আসি। আমি এগিয়ে না গেলে ওরা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যেতো।’

ইতালীর লা নাজিওনে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ

এরপর কী হলো জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি পরে ওই মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সে তার এক বন্ধুর সঙ্গে যেগাযোগ করতে পারছে না। কারণ সে এই এলাকা ঠিকমতো চেনে না। পরে আমি তাকে থাকা-খাওয়া ও গন্তব্যের টিকিটের বিষয়ে আশ্বস্ত করি। এর একটু পরে মেয়েটি জানায়, তার বন্ধুকে সে পেয়েছে। এ সময় মেয়েটি একটা জায়গার নাম উল্লেখ করে জানতে চায় আামি চিনি কিনা? আমি তখন জানিয়েছিলাম, জায়গাটা আমার পরিচিত। এখান থেকে ২/৩ মিনিটের রাস্তা। এরপর মেয়েটি জানায়, তিনি পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। পরে অনুমতি নিয়ে আমার ছবি তুলে নিয়ে যায়।’

হোসেইন আলমগীর গত ১২ বছর ধরে ইতালীতে আছেন। কিন্তু পরিবার ঢাকায় থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সিটি ইউনিভার্সিটিতে ও ছেলে বিডিআর কলেজে পড়াশুনা করছে। নিউমার্কেটে আলমগীর স্টোর নামে আমার দোকান ছিল, সেখানে ২৫ বছর ব্যবসা করেছি। গত এক যুগ ইতালিতে ব্যবসা দেখাশোনা করছি। এখানকার বাঙালি ফুল ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে ফুল নিয়ে বিক্রি করেন।’

এদিকে, ইতালীর স্থানীয় পত্রিকাসহ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টেও এ ঘটনা প্রকাশিত হয়। সেখানে আলমগীরের নিঃস্বার্থ সাহসিকতার প্রশংসা করে ভুক্তভোগী তরুণী গায়া গুরনোত্তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট থেকে ঘটনার পুরো বিবরণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পিজা ডেলা রিপাবলিকার পাশের রাস্তায় হাঁটার সময় ধর্ষণের উদ্দেশে ওই তরুণীর পিছু নেয় ২৫ মদ্যপ। এ সময় তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মদ্যপরা তাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে। তবে শেষ পর্যন্ত হোসেইন আলমগীরের সহায়তায় দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বেঁচে যান ওই তরুণী।