ইউএনও ওয়াহিদার ওপর একাই হামলা চালিয়েছিল রবিউল

সরকারি বাসভবনে ঢুকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর একাই হামলা চালিয়েছিল তারই অফিসের বরখাস্তকৃত কর্মচারী (মালি) রবিউল ইসলাম। রোববার আদালতে রবিউলের ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম জাফর এ তথ্য জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফা তিন দিনের রিমান্ড শেষে রবিউল ইসলামকে রোববার সকাল ১০টায় দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে নেয়া হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় আদালত থেকে বের করা হয় রবিউলকে। এরপর দিনাজপুর ডিবি পুলিশ তাকে জেলা কারাগারে দিয়ে আসে।

বেলা সাড়ে ৩টায় আদালত থেকে রবিউলকে বের করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম জাফর সাংবাদিকদের জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় রবিউল ইসলাম রিমান্ডে আমাদের কাছে দায় স্বীকার করে। দায় স্বীকারের একপর্যায়ে আমরা আদালতে আবেদন দিয়েছিলাম তার স্বীকারোক্তিমূলক দায় লেখার জন্য। আদালত তার স্বেচ্ছায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন এবং রবিউল এ ঘটনায় তার দায় স্বীকার করেছেন।

এ হামলার ঘটনায় তিনি একাই ছিলেন বলে জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন ঘোড়াঘাট পৌর যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল ইসলাম, রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম, সান্টু কুমার দাস, ইউএনওর বাসভবনের নৈশ্যপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশ এবং ইউএনও অফিসের সাময়িক বরখাস্তকৃত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (মালি) রবিউল ইসলাম।

আসামির মধ্যে সর্বশেষ গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলামকে গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ছয় দিনের দিনের রিমান্ড শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতে তাকে হাজির করা হয়। সেদিন দীর্ঘ সাত ঘণ্টা আদালতে রেখেও রবিউল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেয়ায় দ্বিতীয় দফায় তাকে আবার তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে রোববার আদালতে হাজির করা হলে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রবিউল ইসলাম।

এর আগে এ ঘটনায় গত কয়েক দিনে আদালতে ৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করে, এ ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে আসাদুল ইসলাম।

পাশাপাশি গত ১২ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানান, গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম ইউএনওর ওপর হামলা ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

র‌্যাবের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দেয়া আসাদুল ইসলামকে ৭ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে সোপর্দ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার নতুন কোনো আবেদন না থাকায় আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। পাশাপাশি পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দেয়া রবিউল ইসলামকে প্রথম দফায় ছয় দিন এবং দ্বিতীয় দফায় আরও তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড়ভাই শেখ ফরিদ উদ্দীন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি ঘোড়াঘাট থানা থেকে স্থানান্তর করে দিনাজপুর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম, নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার দাসকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নতুন কোনো আবেদন না থাকায় আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করে। মামলার আরেক আসামি নাদিম হোসেন পলাশকে রিমান্ডে না নিয়েই আদালতে সোপর্দ করা হয়। সর্বশেষ আসামি রবিউল ইসলামকে প্রথম দফায় ছয় দিন ও দ্বিতীয় দফায় তিন দিন রিমান্ড শেষে রোববার দিনাজপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

 

সূত্রঃ যুগান্তর