আ.লীগের প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জে ১৬২ আসনে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৪ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্য দলগুলোর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় ১০২ আসনে জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। বাকি ১৬২ আসনে দলটির প্রার্থীদের তীব্র লড়াই করতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সব কটিতেই নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের। নির্ভার থাকা ১০২টি আসনের মধ্যে ৭৭টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দল ও নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট ও মিত্রদলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ৩২টি আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ছয়টি এবং জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। বাকি ২৬৮ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিলেও খেলাপি ঋণ ও দ্বৈত নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন কারণে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড়ায় ২৬৪ জনে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দল প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে আওয়ামী লীগই। অর্থাৎ নৌকার বিপরীতে আছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে ৭৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। ফলে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীবিহীন ৭৭ আসন ছাড়া আরও অন্তত ২৫টি আসনে অর্থাৎ মোট ১০২ আসনে নির্ভার রয়েছে নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে ১৬২ আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।

নির্ভার ১০২ : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নির্ভার থাকা ১০২ আসনের মধ্যে ৭৭টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে চারটি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সেগুলো হলো- পঞ্চগড় ২, ঠাকুরগাঁও ১, রংপুর ৪ ও কুড়িগ্রাম ১।

রাজশাহী বিভাগের ৮টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সেগুলো হলো- বগুড়া ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩, রাজশাহী ৩, সিরাজগঞ্জ ১, ২ ও ৪; পাবনা ২ ও ৫। খুলনা বিভাগের পাঁচটিতে স্বতন্ত্র নেই। সেগুলো হলো- মাগুরা ২, নড়াইল ২, বাগেরহাট ১, খুলনা ৫ ও সাতক্ষীরা ৩। বরিশাল বিভাগের স্বতন্ত্র নেই সাতটিতে। সেগুলো হলো- বরগুনা ২, পটুয়াখালী ১ ও ২; ভোলা ১ ও ২; বরিশাল ১, ঝালকাঠি ২। ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের মধ্যে স্বতন্ত্র নেই ১৫টিতে। আসনগুলো হলো- টাঙ্গাইল ৮, মানিকগঞ্জ ৩, ঢাকা ১, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৫; নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫; গোপালগঞ্জ ৩, মাদারীপুর ১ ও ২; শরীয়তপুর ৩।

ময়মনসিংহ বিভাগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই ছয়টিতে। সেগুলো হলো- জামালপুর ১ ও ৩; ময়মনসিংহ ৫ ও ১০; নেত্রকোনা ৪ ও কিশোরগঞ্জ ৪। সিলেট বিভাগের ছয়টিতে স্বতন্ত্র নেই। আসনগুলো হলো- সিলেট ১, ২ ও ৪; মৌলভীবাজার ৩ ও ৪ এবং হবিগঞ্জ ৩। চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের মধ্যে ২০টিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। আসনগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪ ও ৬; কুমিল্লা ১, ৩, ৭, ৯ ও ১০; চাঁদপুর ১, নোয়াখালী ৫ ও ৬; চট্টগ্রাম ৪, ৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার ২, ৩ ও ৪ এবং খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

এসব আসনে অন্য কোনো দল থেকেও শক্তিশালী প্রার্থী নেই। এ ছাড়া বাকি ২৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও শক্তিশালী কেউ নেই। এ ছাড়া অন্য দল থেকেও চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো প্রার্থী নেই।

জানা গেছে, জয়ের পথে এগিয়ে থাকা আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়-২, ঠাকুরগাঁও-১, দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৬, নীলফামারী-১, রংপুর-৪, রংপুর-৬, জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-৫, বগুড়া-৭, রাজশাহী-৩, রাজশাহী-৪, নাটোর-২, সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৪, সিরাজগঞ্জ-৬, পাবনা-২, পাবনা-৪, পাবনা-৫, যশোর-২, যশোর-৪, মাগুরা-১, মাগুরা-২, নড়াইল-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-২, বাগেরহাট-৪, খুলনা-১, খুলনা-২, খুলনা-৩, খুলনা-৬, সাতক্ষীরা-৩, বরগুনা-২, পটুয়াখালী-২, ভোলা-১, ভোলা-২, ভোলা-৩, ভোলা-৪, বরিশাল-১, বরিশাল-৫, ঝালকাঠি-১, ঝালকাঠি-২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল-৬, টাঙ্গাইল-৭, জামালপুর-১, জামালপুর-৩, শেরপুর-২, নেত্রকোনা-১, নেত্রকোনা-৪, নেত্রকোনা-৫, কিশোরগঞ্জ-৪, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৬, ঢাকা-৭, ঢাকা-৮, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৫, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, গাজীপুর-৪, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৫, নারায়ণগঞ্জ-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, শরীয়তপুর-১, শরীয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, সুনামগঞ্জ-৫, সিলেট-১, সিলেট-৪, মৌলভীবাজার-১, মৌলভীবাজার-৩, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, কুমিল্লা-৩, কুমিল্লা-৮, কুমিল্লা-৯, কুমিল্লা-১০, কুমিল্লা-১১, চাঁদপুর-১, চাঁদপুর-২, ফেনী-১, ফেনী-২, নোয়াখালী-১, নোয়াখালী-৫, নোয়াখালী-৬, চট্টগ্রাম-৪, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, চট্টগ্রাম-১৩, চট্টগ্রাম-১৪, কক্সবাজার-২, কক্সবাজার-৩, কক্সবাজার-৪, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৬২ আসনে : অন্যদিকে ১৬২টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের জয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এসব প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন দলের মনোনয়নবঞ্চিত এমপি, সদ্য পদত্যাগকৃত এবং মনোনয়ন না পাওয়া উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

এর মধ্যে যেমন বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীকের প্রার্থী হলেন বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম। ওই আসনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ জাহিদ ফারুকের পক্ষে কাজ করার সম্ভাবনা খুবই কম। এমনকি দলের অনেক নেতাও নৌকার ওই প্রার্থীর সঙ্গে নেই। ফলে তিনি শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জে পড়েছেন।

ফরিদপুর-৩ আসনে দলের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে আজাদ নির্বাচন করছেন। দুই প্রার্থীকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ভোটের ফল ঘরে তুলতে হবে।

ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহ, সেখানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এর আগেও নিক্সন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে কাজী জাফর উল্লাহকে হারিয়েছেন। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় হতে পারে অনেকে মনে করেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে মাহবুব আলী ফের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসনে স্বতন্ত্র র্প্রার্থী আছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পাওয়া, ক্রীড়া অঙ্গনে ভূমিকা রাখা এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করার কারণে তাকে পরাজিত করে নৌকার বিজয় অনেকটা কঠিন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন- এমন আসনগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়-১, ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-১, দিনাজপুর-৩, ৪, ৫; নীলফামারী-২, ৩, ৪; লালমনিরহাট-১, ২, ৩; রংপুর-১, ২, ৩, ৫; কুড়িগ্রাম-২, ৩, ৪; গাইবান্ধা-১, ২, ৪, ৫; বগুড়া-১, ২, ৩, ৪, ৬; চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, ২; নওগাঁ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬; রাজশাহী-১, ২,৫, ৬; নাটোর-১, ৩, ৪; সিরাজগঞ্জ-৩, ৫, ৭; পাবনা-১, ৩; মেহেরপুর-১, ২; কুষ্টিয়া-১, ২, ৩, ৪; চুয়াডাঙ্গা-১, ২; ঝিনাইদহ-১, ২, ৩, ৪; যশোর-১, ৫, ৬; বাগেরহাট-৩, খুলনা-৪, সাতক্ষীরা-১, ২, ৪, ৫; বরগুনা-১, ৩; পটুয়াখালী-৩, ৪; বরিশাল-২, ৩, ৬; পিরোজপুর-১, ২, ৩, ৪; টাঙ্গাইল-২, ৩, ৪, ৫, ৮; জামালপুর-২, ৪, ৫; শেরপুর-১, ৩; ময়মনসিংহ-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১; নেত্রকোনা-২, ৩; কিশোরগঞ্জ-১, ২, ৩, ৫; মানিকগঞ্জ-১, ২, ৪; মুন্সীগঞ্জ-১, ৩, ৪; ঢাকা- ৪, ৫, ১৮, ১৯, ১৪; গাজীপুর-১, ২, ৩; নরসিংদী-১, ৩, ৪; নারায়ণগঞ্জ-১, ৩, ৫; রাজবাড়ী-১, ২; ফরিদপুর-১, ২, ৩, ৪, ৫; গোপালগঞ্জ-১ মাদারীপুর-৩ শরীয়তপুর-২, সুনামগঞ্জ-১, ২, ৪; সিলেট-২, ৩, ৫, ৬; মৌলভীবাজার-২, হবিগঞ্জ-১, ২, ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ২, ৩; কুমিল্লা-২, ৪, ৫, ৬, ৭; চাঁদপুর-৩, ৪, ৫, ৬; ফেনী-৩, নোয়াখালী-২, ৩, ৪; লক্ষ্মীপুর-১, ২, ৩, ৪;চট্টগ্রাম-১, ২, ৩, ৫, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৫।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং একই সঙ্গে পুরাতন রাজনৈতিক দল। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগই অবদান রেখেছে। এই দল চায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। জনগণের মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো দল বা কেউ নির্বাচনে না এলেও জনগণ ঘরে বসে থাকবে না। ৭ জানুযুয়ারি তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবে।’ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, কে স্বতন্ত্র হবে আর কে হবে না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।