আ.লীগের প্রাথমিক ধারণা লিটন হত্যাকাণ্ড টার্গেট কিলিং

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গাইবান্ধার-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডে হতবিহ্বল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ হত্যাকাণ্ড দলটির ভেতরে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জামায়াত-বিএনপির তাণ্ডব সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছে লিটনকে। সেখানে লড়াই করে তাকে টিকে থাকতে হয়েছে, রাজনীতি করতে হয়েছে ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হয়েছে।

আ. লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে টার্গেট কিলিংও। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ নিশ্চয়ই উদঘাটন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন তারা।

শনিবার বিকালে গ্রামের বাড়ির নিজ বাসভবনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত লিটনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান তিনি। লিটন গত বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়ি যান।

লিটনের হত্যাকাণ্ডের সংবাদে আওয়ামী লীগের দুই সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাতে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা দুজন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যাচ্ছি রাতেই। সেখানে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘ওই অঞ্চলটি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকে সেখানে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব অব্যাহত ছিল। এই লিটনই সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন।আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি,  সে কারণে গাইবান্ধায় লিটন জঙ্গি-জামায়াতের টার্গেটে পরিণত হতে পারে। আর সেই টার্গেটেই এ হত্যাকাণ্ড। ’

.

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিটনের হত্যাকাণ্ড উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘ওই অঞ্চলটি জামায়াত অধ্যুষিত।সেখানে লিটন অনেক কষ্ট করে রাজনীতি করে আসছিলেন। তার ওপরে বেশ কয়েকবার হামলাও হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘এটি হতে পারে টার্গেট কিলিং। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চয়ই খুঁজে বের করবে, কারা এর সঙ্গে জড়িত।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন সিটিং এমপিকে নিজ বাসভবনে ঢুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যার পর নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবে, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর মতো ভাষা জানা নাই। আমরা শোকাভিভূত।’ হানিফ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শিগগিরই খুঁজে বের করবে। ’

এই হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমপি লিটন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করবে এবং শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।’

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির ঘটনাস্থল পরিদর্শন

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রংপুর পুলিশ রেঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার (ডিইআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

শনিবার রাত ১০টার দিকে তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বাড়িতে আসেন।

এসময় তিনি এমপি লিটনের গুলিবিদ্ধ হওয়া ঘর (বেড রুম) দেখেন এবং সেখানে পড়ে থাকা গুলির খোসা, পানের বাটা ও মোবাইল ফোনসহ আলামত দেখেন।

গুলির ঘটনা দেখা এমপি লিটনের বাড়ির উঠানে ক্রিকেট খেলতে থাকা একটি ১২ বছরের শিশুসহ বাড়িতে থাকা লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।

এসময় রংপুর পুলিশ রেঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার (ডিইআইজি) বশির আহম্মেদের সঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আশরাফুল আলম (বিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল্লাহ আল ফারুক, সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল আলমসহ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন উপস্থিত ছিলেন।

হত্যার ঘটনায় আটক তিন

সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাত ১০টার দিকে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের সুন্দরগঞ্জ থানা হাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’ তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আটক  ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা জানান।

তিনি আরও জানান, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাসহ দুর্বৃত্তদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে।’[

.

ঘাতকরা এসেছিল মোটরসাইকেলে

এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার জানান, ‘শনিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক এমপি লিটনের বাড়িতে আসে। এসময় তিনি ঘরের সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। ওই যুবকরা হেলমেট পরা ছিল। একজন মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়েছিল। দুজন বেতারের কাছে এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছে বললে দুই যুবক ঘরে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি করে। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’

.

হিমঘরে লিটনের মরদেহ, বুকে দু’টি গুলি লেগে মৃত্যু

গুলিতে নিহত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আলম লিটনের মরদেহ হিমঘরে নেওয়া হয়েছে। তার শরীরে মোট চারটি বুলেট লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানান। দুটি বুলেট বুকে লাগায় তাকে বাঁচানো শেষতক সম্ভব হয়নি। অবশিষ্ট দুটি বুলেটের একটি লেগেছে ডান হাতে, অপরটি ডান কাঁধে। এর আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙায় নিজ বাসভবনে সাবেক এই সংসদ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মঞ্জুরুল আলম লিটনের চিকিৎসক সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিমল চন্দ্র বর্ম্মন বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান। রংপুর রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিচালক (ডিআইজি)খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, রবিবার সকালে সুরতহাল ময়নাতদন্তের পর লিটনের মরদেহ সেদিনই সকাল ১০টা নাগাদ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

গাইবান্ধার  সুন্দরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

শনিবার রাতে এক শোক বিবৃতিতে তিনি বলেন , ‘দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে । হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, যা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না । তাদের হত্যার রাজনীতির পথ ধরেই তারা নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করেছে । এছাড়া আজ  খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেড এ মাহমুদকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়েছে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে একজন পথচারী নিহত হন ।’ প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং স্থানীয় জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান ।

শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ও  তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন