আসাদ কি পদত্যাগ করবে? সিরিয়ায় অভিযান চালাবে তুরস্ক

একদিকে সিরিয়ার মধ্যে চলছে হামলা পালটা হামলা। সিরিয়ার বাশার আল আসাদের বাহিনীর ওপর সর্বশেষ হামলা রাজধানী দামেস্কে। সেনা সদস্যদের বহনকারী বাসে বোমা হামলা হলে কমপক্ষে ১৪ জন সেনা সদস্য মারা যায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে আসাদ বাহিনী হামলা করে ইদলিবে, সেখানে মারা যায় ১০ জন নিরীহ মানুষ।

সিরিয়ায় এই হামলা এবং পালটা হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন জেনেভায় জাতিসংঘের অফিসে বসে দেশটির নতুন সংবিধান লেখার বিষয়ে সম্মত হয় আসাদ রেজিম এবং বিরোধী গ্রুপ।

২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সংবিধান প্রণয়ন প্রসেসে এটাই প্রথম কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অনেকেই মনে করছেন একটা নতুন সংবিধানই হতে পারে সিরিয়ায় গত ১০ বছর ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র উপায়।

গত তিন বছরে এই দুইও পক্ষের এই সংবিধান প্রণয়ন কমিটি অনেকবার বৈঠক করে কিন্তু সমঝোতায় আসতে পারেনি। এই সপ্তাহের শুরুতে তারা নতুন সংবিধান লিখতে সম্মত হয়েছে বলে জানায়। সে অনুযায়ী আজ দুইও পক্ষ নতুন সংবিধান নিয়ে তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবগুলো পেশ করে। সেখানে বিরোধীরা আইনের শাসনের উপড়ে জোড় দেয় আর সরকারী পক্ষ সিরিয়ার অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের উপর জোড় দেয়।

এনজিওদের একটা গ্রুপ আছে সেই ৪৫ জনের সংবিধান কমিটিতে। তারাও তাদের প্রস্তাব দিবে। সেখানে তারাও আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব দিবে। আগামীতে সব পক্ষই নতুন আরও অনেকগুলো বিষয় যোগ করবে তাদের প্রস্তাবে।

কিন্তু সিরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং একটা সমঝোতায় পৌঁছতে দুটি বিষয়ে সমাধানে পৌঁছা সবচেয়ে জরুরি।

এক. সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় থেকে দেশ চালাবে নাকি তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। বিরোধীদের প্রাথমিক এই প্রস্তাবে সে সম্পর্কে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।

পশ্চিমারা, তুরস্ক এবং বিরোধীরা বাশার আল আসাদের পতন চায় এবং সেজন্যই এতো কিছু করছে। তবে সিরিয়া রেজিমের পক্ষ আসাদের পদত্যাগকে দরকষাকষির বাইরে রাখছে। অর্থাৎ তারা আসাদের পদত্যাগ বা ক্ষমতা ছাড়ার প্রস্তাব মানতে নারাজ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকদিন আগেও ঘোষণা দিয়েছে যে সিরিয়ার রাজনীতিতে তারা আসাদকে মেনে নেবে না। তুরস্কও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে।

অন্যদিকে রাশিয়া এবং ইরান আসাদকে ক্ষমতায় রেখেই যে কোনো সমাধানের পক্ষে। তাই সিরিয়ার শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হতে আসাদের ক্ষমতায় থাকা না থাকার বিষয়টির সমাধান হওয়া জরুরি।

দুই. সিরিয়ার অখণ্ডতা এবং সেখানে বিদেশী সৈন্যদের অবস্থান। নতুন এই সংবিধান প্রস্তাবনায় উভয় পক্ষই সিরিয়ার অখণ্ডতার বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশাল একটা অংশ দখল করে আছে কুর্দি সশস্ত্র গ্রুপ পিকেকে/ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী সংগঠনটি। অন্যদিকে তুরস্ক নিয়ন্ত্রণ করছে সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জায়গা।

কুর্দিরা সেখানে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠন করতে চায়। তুরস্ক সেখানে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করতে চায়। এই কুর্দি গ্রুপটির অধীনে আছে সিরিয়ার বড় বড় সব তেল খনি। আমেরিকা সরাসরি সাপোর্ট দিচ্ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে। এখন সিরিয়ার অখণ্ডতা রক্ষা করতে হলে এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। একই সাথে তুরস্কের সমর্থিত ফ্রী সিরিয়ান আর্মি নামক সশস্ত্র গ্রুপটিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাদের অধীনের সব অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে।

সিরিয়ায় তুরস্কের সৈন্য ছাড়াও বিদেশী সৈন্য আছে আমেরিকার, রাশিয়ার এবং ইরানের। নতুন সংবিধানে আসাদের পক্ষ থেকে সব বিদেশী সৈন্যদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?

কারণ রাশিয়া এবং ইরানের সৈন্যরা না হয় আসাদ সরকারের দাওয়াতে সেখানে গেছে। কিন্তু তুরস্ক এবং আমেরিকা? তুরস্ক না হয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র, নিজের সীমান্তে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সাময়িকভাবে সিরিয়ায় আছে। আমেরিকা কি তাহলে আবার আফগানিস্তানের মত তাদের দোসরদের অর্থাৎ কুর্দি পিকেকে/ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে এত অস্ত্রশস্ত্র, টাকা পয়সা দেয়ার পরে তাদেরকে ছেড়ে সিরিয়া থেকে চলে যাবে?

দিন শেষে হয়তো চলে যাবে। যেতে বাধ্য হবে। কিন্তু সিরিয়ার যে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে, উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে যে মিলিয়ন মিলিয়ন নিরীহ মানুষ। শরণার্থী তাবুতে বড় হতে গিয়ে যে সন্তানদের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে গেছে তাদের কী হবে?

সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনার ইঙ্গিত তুরস্কের 

সিরিয়ার মধ্যে তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা বেড়েই চলছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। এরই সূত্র ধরে তুরস্কের সরকার সিরিয়ায় নতুন করে সামরিক অভিযান পরিচালনার ইঙ্গিত দিয়েছে।

দেশটির রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান এ বিষয়ে গত সপ্তাহে জানান যে, তুরস্কের ধৈর্যের সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক তার বাহিনীর ওপর এই হামলার জন্য দায়ী করে কুর্দি পিকেকে/ ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে। এই সন্ত্রাসীদের সাপোর্ট দেয় আমেরিকা এবং রাশিয়া। তাই এই অভিযান পরোক্ষভাবে রাশিয়া এবং আমেরিকার প্রক্সিদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করতে চাইছে তুরস্ক।

সেজন্য সিরিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা এবং অস্ত্র মোতায়েন করছে। তবে অনেকেই মনে করছেন তুরস্কের এখন আসলে এই সামরকি অভিযান পরিচালনার ইচ্ছা নেই। কারণ দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে সরকার বেকায়দায় আছে। এরই মধ্যে নতুন এই অভিযান মানে নতুন করে অর্থ খরচ। বিরোধীদলগুলো এই অভিযান সমর্থন করবে না। তাই তুরস্কের সরকার এখন এই অভিযানের হুমকি দিয়ে আসলে আমেরিকা এবং রাশিয়ার সাথে সিরিয়া নিয়ে নতুন করে সমঝোতায় আসতে চাইছে।

সূত্রঃ যুগান্তর