আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমের ব্যাপক ব্যবহারের চিন্তা

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে নিজেদের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা করছে। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হবে না। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র ছিল তিন হাজার ৫৮২টি। গড়ে প্রতিটি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র ছিল ১৫টি করে। সে ক্ষেত্রে এবারও যদি প্রায় একইসংখ্যক পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন হয়, তাহলে অর্ধেকের বেশি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ইসির রয়েছে। আর এ নির্বাচন একাধিক দিনে হলে সব পৌরসভায় ইভিএম ব্যবহারে সমস্যা হবে না। এ ছাড়া পৌরসভার নির্বাচন যেহেতু শহর এলাকায়, সে ক্ষেত্রে এর ব্যবহারে প্রতিকূলতাও কম।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে দুই হাজার ৪৮৬টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। দেশে ভোটার শনাক্তকরণ পদ্ধতির বর্তমান ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটির ওই নির্বাচনেই ব্যাপকভাবে ইভিএম ব্যবহূত হয়। তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করেও ইসি শেষ পর্যন্ত ছয়টি আসনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী  বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে যত বেশি সম্ভব ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। এ বিষয়ে ইসির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পৌরসভার পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তাভাবনা আছে। এ ছাড়া আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন ছাড়া জাতীয় সংসদের বাকি উপনির্বাচনগুলো ইভিএমে করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষককে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইভিএমের মাধ্যমে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কম ভোটার উপস্থিতির কারণে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। মাত্র করোনা আতঙ্কের মধ্যে গত ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পেড়েছে মাত্র ৫.২৮ শতাংশ। প্রায় ভোটার শূন্য এ উপনির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বলা হয়েছিল তারা বিব্রত নয়। সে সময় ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য ভোট পড়ার হার কমে গেছে।

তবে বর্তমান কমিশনের অধীনেই দেশে আগের নির্বাচনগুলোতে ইভিএমে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার নজির রয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয় তাতে গড়ে ৫১.৪২ শতাংশ ভোট পড়ে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ৯ আসনে ভোট পড়ে ৬২.৮৭ শতাংশ। ঢাকা-৬ আসনে পড়ে ৪৫.২৬ ও ঢাকা-১৩ আসনে পড়ে ৪৩.৭ শতাংশ ভোট।

ইভিএমের ভোটে চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভায় সর্বোচ্চ ৮১.৪০ শতাংশ ভোট পড়ে। এ ছাড়া একই দিন পাবনার মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৪.৩২ শতাংশ। একই দিন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়ে ২৩ শতাংশ। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ভোট পড়ে ২৫.৩০ শতাংশ, আর দক্ষিণে পড়ে ২৯ শতাংশ।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কারো কারো ধারণা, নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতা এবং সে কারণে ভোটারদের অনাগ্রহ, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ না হওয়া এবং ইভিএমে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকার কারণে ইভিএমের ভোটে ভোট প্রদানের প্রকৃত তথ্য উঠে আসে। যা ব্যালট পেপারের ভোটে সম্ভব হয় না।

প্রসঙ্গত, আগামী ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশের নির্বাচন উপযোগী প্রায় আড়াই শ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল হতে পারে নভেম্বরের শেষ দিকে। এ লক্ষে এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সারা দেশের নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে গত বুধবার চিঠি দিয়েছে নির্বাচান কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া এরই মধ্যে পৌরসভা ভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কাজও শুরু হয়ে গেছে।

এর এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর সারা দেশে একযোগে ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোট হয় ৩০ ডিসেম্বর। গতবারের ওই নির্বাচন ছিল দেশে প্রথমবারের মতো পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। তার আগে ২০১১ সালের ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চার ধাপে ২৬৯টি পৌরসভার নির্বাচন হয়েছিল। পৌরসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পর ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় সমর্থন পেতে আগেভাগেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের আস্থাভাজন হওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ তৎপরতা বেশি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ