আশা করি সব দল নির্বাচনে আসবে, তবে…

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি সব দল আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। কোন দল নির্বাচনে আসবে, কোন দল আসবে না এটা তাদের দলের ব্যাপার- সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি।  সাধারণ মানুষ যখন ভালো থাকে, দেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তখন কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র আছে থাকবে, এটাকে পরোয়া করি না। শুধু নেতা-কর্মীদের একটু সর্তক থাকতে বলছি, যাতে তারা মনে না করে আমরা ১০ বছর উন্নয়ন করেছি। এটা ভেবে যেনো বসে না থাকে।

পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার বিচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ল’ উইল টেক ইটস ওউন কোর্স (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)।  আর কিছু বললে তো বলবেন, বেশি বলি।

এসকে সিনহার বিষয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রথম ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে বিচারপতি সিনহাকে প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। তিনি সেই জায়গা রাখতে ‍পারেননি, তার মান রাখতে পারেননি।

এসকে সিনহা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন না দেওয়া এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্বাচনসহ বিভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। কে সমর্থন করলো, কে করলো না, পরমুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। কারো সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে সেই ক্ষমতা আমি চাইনি।

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে নি‌উইয়র্ক সফরের সময় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেউ কোনো পরামর্শ দেয়নি। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি সবাই উইশ করেছে আমরা যেনো আবার নির্বাচিত হই। তারা বার বার আশা প্রকাশ করেছেন আবার যেনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের সঙ্গে দেখা হয়।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনেকে হাত তালি দিলে শেখ হাসিনা বলেন, তালি দেওয়ার কিছু নেই। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। আমি তাদেরও এ কথা বলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছে উন্নয়ন যাতে দৃশ্যমান হয় সেজন্য আমার ইচ্ছা ছিল পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকা। আমি তা পেরেছি এবং জনগণের জন্য কাজ করেছি। এখন আমার কাছে ক্ষমতা- থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই। আমার কোনোও চিন্তা নাই।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সম্প্রসারণের বিপরীতে ক্ষমতাসীন মহাজোট সম্প্রসারণে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সেরকম চিন্তা নেই। তবে আমাদের সঙ্গে কেউ আসলে আমরা নিবো।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের সম্প্রসারণ নিয়ে আমার কোনোও ভয় নেই। ভয় থাকে তার, যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই।

বিরোধীজোটকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করবো।

তিনি বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশে ভোট আছে দুপক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এখন অ্যান্টি আওয়ামী লীগের ভোটগুলোকে তো একটা জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। শত ফুল ফুটতে দিন।

শেখ হাসিনা বলেন, জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কিনা বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা বা সেই সাহস তাদের আছে কিনা, সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বধীন জোটকে সমাবেশ করার জন্য মানুষ দিয়েও সহযোগিতা করবেন বলে রশিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই।

বিগত সময়ে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা জায়গা উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কি ভাবতে পেরেছিলো এতো ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবে। আমরা কিন্তু করেছি।

তিনি বলেন, আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছি। দিন বদল কি হয়নি?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি শুধু বাংলাদেশে নয় কোথাও, শুধু ৭২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর সময়টা বাদে এতো উন্নয়ন, অগ্রগতি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, আরআইআর বলছে বাংলাদেশে ৬৬ শতাংশ মানুষ অত্যন্ত সন্তুষ্ট, বাকিদের মধ্যে অনেকে মোটামুটি সন্তুষ্ট।

খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সেই দলটির জন্য এতো মায়া কান্না কেন? যারা মানুষ পোড়ানোর খেলা খেললো তাদের জন্য এতো মায়া কান্না কেন?

তিনি বলেন, আপনারা কি সেই পোঁড়া ‍মানুষগুলোর খোঁজ রেখেছেন। একটু খোঁজ নিয়েন যারা বেঁচে আছে তারা কতো কষ্টে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সামান্য এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না, ক্ষমতার জন্য মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, তাদের জন্য এতো মায়া কান্না কেন? এরা স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় আসবে, দেশ চালাবে। এরা কি দেশ চালাবে, যারা সামান্য এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ‍অব্যহত উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।