আল্পনা গ্রাম : পর্যটনের এক নতুন সম্ভাবনা

বাঁধন রায়, রাবি:

পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ি। বাড়ির টিনের চাল, মাটির দেয়াল জুড়ে রয়েছে নানা রঙের ছবি। ছবিতে ফুল-ফল, লতাপাতা, গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালিসহ বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণির চিত্র ফুটে উঠেছে। মাটির ঘরগুলো দেখলে যে কেউ শিল্পীর পটে আঁকা ছবির সাথে তুলনা করবেন। লোকমুখে এই গ্রাম ‘আলপনা গ্রাম’ হলেও গ্রামটির প্রকৃত নাম টিকোইল। গ্রামটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় অবস্থিত।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ওই গ্রামের একটি মাটির বাড়িতে প্রথমে আলপনা করা ছিলো। সেই বাড়ির নাম ছিলো আলপনা বাড়ি। পরবর্তীতে সেই নাম লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে গ্রামটি আলপনা গ্রাম নামে পরিচিতি পায়। টিকোইল গ্রামটি আলপনা গ্রাম হওয়ার পেছনে রয়েছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা দেখন বর্মণের হাতের কাজ। ছোট বয়স থেকেই আলপনা করার শখ ছিলো দেখনের। বিয়ের পর স্বামী দাসু বর্মণের বাড়িটির মাটির দেয়াল ও উঠানে তিনি তার হাতের কারুকার্য দিয়ে বাহারী রঙের ফুল, পাখি, লতাপাতা আর হরেক রকমের চিত্র এঁকেছেন। যা নজর কেড়েছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ভ্রমন পিপাসুদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দেখন বর্মনের বাড়িটি মাটির দেয়ালের তৈরি। দোতলা বাড়িটি টিনের ছাউনি দেয়া। উঠানে রয়েছে আলপনার বিভিন্ন হাতের কারুকার্য। গ্রামটিতে হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ৯০টির মতো পরিবারের বাড়ি আলপনায় ছেঁয়ে যায়।

এমন উদ্যোগের বিষয়ে দেখন বর্মন বলেন, ছোট বয়স থেকেই আলপনা করার শখ ছিলো। হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে আলপনা আঁকতাম। একসময় শখের বশে সাদা ও লাল মাটি আর চালের গুড়া দিয়ে রং বানিয়ে উঠান আর মাটির ঘরের দেয়ালে আলপনা করা শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে এলাকায় রঙ পাওয়া যেতো না। খড়িমাটি ভিজিয়ে ‘আখির’ বের করে তা থেকে লাল রং আর আতপ চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় সাদা রঙ। এই স্তর দিয়েই তৈরি করা হতো সাদা রঙ। এছাড়াও রং স্থায়ী করার জন্য শুকনা বরই, চূর্ণের আঠা, আমের আঁটির শাঁসচূর্ণ, গিরিমাটি, মানকচু ও কলাগাছের আঠার সঙ্গে রঙের মিশ্রণ কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে আলপনা আঁকার রং তৈরি করা হয়।

দেখন বর্মনের নাতনি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের দর্শনের শিক্ষার্থী রিমা রানী বর্মন বলেন, ছোট বেলা থেকেই দিদাকে (নানি) দেখে আসছি আলপনা দিতে। দিদাকে দেখে আশপাশের শতাধিক পরিবার বাড়িতে আলপনা এঁকেছে। কিন্তু এখন তার বয়স প্রায় ৫৬ বছরের মতো। চোখেও দেখতে পান না ভালো করে । তবুও সময় পেলে আলপনা করতে বসে যান বাড়ির উঠানে কিংবা দেয়ালে।

তিনি জানান, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক বিভিন্ন সময় বাড়িটি দেখতে আসে। ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানি, চিন, ইংল্যান্ড, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা আলপনা বাড়িতে ভ্রমন করেছেন। যদি সরকারি পর্যাপÍ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তবে পুরো গ্রামকে আলপনায় চিত্রিত করে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাদেরকে কয়েকবার অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সমপ্রসারিত হয়নি। ওই বাড়িসহ যদি এলাকার আরও কয়েকটি বাড়িতে এরকম আলপনা করা হয়। এতে বিষয়টি নিয়ে উপরমহলে জানানো যেতে পারে।

জি/আর