আরব-আমিরাতের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। তবে এ চুক্তি নিয়ে মিসরসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান সরাসরি সমর্থন দিলেও ওসব দেশের নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমিরাতের যুবরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

ওই চুক্তি ঘোষণার পর আমিরাত যুবরাজ একটি টুইট করেন। ওই টুইটে অনেকেই এসে আমিরাত যুবরাজের এ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

কাদের ইব্রাহিম নামের সোমালিয়ান এক নাগরিক রিটুইটে মোহাম্মদ বিন জায়েদের উদ্দেশে বলেন, ইসরাইলকে গ্রহণের মাধ্যমে আমিরাত ফিলিস্তিনিদের পিঠে চুরিকাঘাত করেছে। এখন অনেক আরব দেশও এটিকে অনুসরণ করবে। ভূরাজনীতিতে এটি একটি বড় পরিবর্তন। আমিরাতের জন্য এ চুক্তি লজ্জাজজনক।

ম্যাক্সিকোর নাগরিক ম্যানুয়াল গ্রেসার ওর্তেগা নামের এক খ্রিস্টান ক্যাথলিক আমিরাত যুবরাজকে রিটুইট করে প্রশ্ন করেন আপনাদের চুরি করা ভূমি কি ওরা ফেরত দেবে?

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে বিশ্বাসঘাতকতা করেও আরব আমিরাত একে ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মত্যাগ করার মতো কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। এটা বিশ্বের পুরো মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’

তুরস্কের বরাত দিয়ে এএফপি ও গার্ডিয়ান বলছে, আমিরাতের এ ভণ্ডামি কোনো দিনও ক্ষমা পাবে না। এ চুক্তি মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, এ ঘটনার পর ফিলিস্তিনে নিযু্ক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকতে আরব লীগের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।

মুসলমানদের প্রথম কিবলার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ শতাব্দির লেনদেন বা শতাব্দির কথিত সেরা চুক্তি নামক পরিকল্পনারই অংশ বলে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন। ইসরাইল আশা করছে আরও আরব দেশ শিগগিরই আমিরাতের মত পদক্ষেপ নেবে এবং বাহরাইন হবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় দেশ।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জাতিসহ বিশ্বের কোনো স্বাধীনচেতা জাতি অবৈধ দখলদার ও অপরাধী ইসরাইলের সঙ্গে তার অপরাধের ভাগীদারদের এই সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়াকে কখনো ক্ষমা করবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা আল-আকসা মসজিদ মুক্ত করার লক্ষ্যে গত সাত দশক ধরে যে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলে এসেছে তা আজ হোক কিংবা কাল ইসরাইলসহ তার অপরাধের সকল সহযোগীকে একসঙ্গে গ্রাস করবে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, একটি অবৈধ ও মানবতাবিরোধী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত চরম বিপজ্জনক কাজ করেছে। এই ঘটনার জের ধরে পারস্য উপসাগরে সম্ভাব্য যেকোনো পরিণতির জন্য আবুধাবিসহ এ অঞ্চলে তার সহযোগী সরকারগুলোকে দায়ী থাকতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইতিহাস বলে দেবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনি জাতিসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর পিঠে যে খঞ্জর বসিয়েছে তার পরিণতিতে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ অক্ষ আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে। সেইসঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার তাবেদার আরব শাসকদের বিরুদ্ধে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে জনগণের ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী হবে।

ইসরালকে অবৈধ ও মানবতাবিরোধী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে ইরান জানায়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত চরম বিপজ্জনক কাজ করেছে। এ ঘটনার জের ধরে পারস্য উপসাগরে সম্ভাব্য যে কোনো পরিণতির জন্য আবুধাবিসহ এ অঞ্চলে তার সহযোগী সরকারগুলোকে দায়ী থাকতে হবে।

এদিকে আরব আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকমী সংগঠন হামাস। ওই চুক্তিকে ফিলিস্তিনসহ পুরো মুসলিম উম্মাহর পিঠে ছুরিকাঘাত বলে উল্লেখ করে সংগঠনটি।

১৯৪৮ সালে ইসরাইলের স্বাধীনতার ঘোষণার পর ইসরাইল ও আরবের মধ্যে এটি তৃতীয় চুক্তি। এর আগে মিসর ১৯৭৯ সালে ও জর্ডান ১৯৯৪ সালে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এখন পর্যন্ত উপসাগরীয় কোনো আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবেলায় ইসরাইলের সঙ্গে এসব দেশের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে।

এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, এ চুক্তি ফিলিস্তিনিদের কোনো স্বার্থের অনকূলে নয়। এতে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে এ চুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণের পিঠে ষড়যন্ত্রমূলক ছুরিকাঘাত।

হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বারহুম বলেন, তেলআবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনি জাতির পিঠে ছুরি বসিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত শুধু ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করবে। ফিলিস্তিনি সংগঠন পপুলার রেসিস্ট্যান্স কমিটি চুক্তিটিকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্ট নতুন চুক্তিকে আত্মসমর্পণের সঙ্গে তুলনা করেছে।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন- ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমঝোতায় পৌঁছেছে। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও ট্রাম্প এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের আশা এ বিরাট ঐতিহাসিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির অগ্রগতিকে এগিয়ে নেবে।

এএফপির খবরে বলা হয়, এদিকে নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন বক্তৃতায় বলেছেন, পশ্চিম তীরে দখলের বিষয়টি স্থগিত হয়েছে, তবে তা বাতিল করা হয়নি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমির অধিকার ত্যাগ করতে পারব না’।

 

সূত্রঃ যুগান্তর