আরডিএর’র চেয়ারম্যান পদ নিয়ে চলছে দৌড়াদৌড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বর্তমান চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বমোট ৫ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকলেন। আগামী ৩০ আগস্ট তাঁর ৫ বছর মেয়াদ শেষ হবে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক থেকে আরডিএর চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পেয়ে এই ৫ বছরে অগাধ টাকার মালিকও হয়েছেন এই বজরুল রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করে সাত কাঠার প্লট হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগের তদন্তও করছে দুদক। এই অবস্থায় আবারো ক্ষমতা ধরে রাখতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন বজলুর রহমান।

এদিকে চেয়ারম্যান পদ পেতে বজলুর রহমান ছাড়াও রাজশাহীর আরো অন্তত ৪ জনের নাম শোনা যাচ্ছে এই পদে আসার তালিকায়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, আরেক সহসভাপতি নওসের আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বজলুর রহমান তৃতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছেন। এর আগে প্রথমে তাঁকে এক বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে দুই দফায় দুই বছর করে সময় বৃদ্ধি করে মোট ৫ বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। সর্বশেষ বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ৩০ আগস্ট তাঁর মেয়াদ শেষ হবে।

রাজশাহীর বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মুল্যবান ৩১ প্লট হরিলুটের ঘটনায় তদন্ত নেমেছে দুদক। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এই প্লট কেলেংকারির তদন্ত করছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ মে বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১ প্লট বরাদ্দের নামে হরিলুট করা হয়। লটারির মাধ্যমে ওই প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হলেও আয়তনে বড় ও অধিকাংশ প্লটগুলিই নিজেদের দখলে নেন আরডিএর চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

যাঁদের মধ্যে রয়েছেন, আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জণ দাস ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামানসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারি। ওই সময় বনলতার প্লট হরিলুটের ঘটনায় রাজশাহীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলে নড়ে-চড়ে বসে প্রশাসন। এই প্লট কেলেঙ্কারীর ঘটনায় সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এছাড়াও ভবন অনুমোদন দেওয়া, আরডিএর মার্কেট ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বিগত কয়েকটি বছরে। এসব নিয়েই বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

এদিকে এতোসব অভিযোগ থাকার পরেও বর্তমান চেয়ারম্যান বজলুর রহমান আবারো চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকতে তদবির শুরু করেছেন।

এর বাইরে চেয়ারম্যান পদ পেতে আরো যাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেয়রপতœী শাহীন আক্তার রেনী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, আরেক সহসভাপতি নওসরে আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের নাম শোনা যাচ্ছে।

এঁদের মধ্যে তরুণ নেতা ডাবলু সরকার ও আসাদুজ্জামান আসাদ দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হলেও গত ৫ বছরে দলের বাইরে তাঁদের কোনো পদ দেওয়া হয়নি। মেয়রপত্নী শাহীন আক্তার রেনীরও সুনাম রয়েছে নগরজুড়ে। তাঁর স্বামী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাসিকের বর্তমান মেয়র। ফলে এই তিনজনের মধ্যে যে কাউকেই আরডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাইছেন খোদ আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যানের কারণে অতিষ্ঠ আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি যেসব কর্মকা- করে চলেছেন, সেগুলোর ভবিশ্যত দায়ভার নিয়েও শঙ্কিত তাঁরা। এই অবস্থায় তৃতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে আবারো বজলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করা হোক-এটি কেউই চাইছেন না।’

 

স/আর