আরএমপির ওয়াকিটকি ছিনতাইকারীর কাছে ছিল ৫ মাস!

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার একটি ওয়াকিটকি খোয়া যায়। এটি ব্যবহার করে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দিয়ে নগরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার চালানো হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তল্লাশির নামে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এক ছিনতাইকারী। তখন তাঁর কাছে পাওয়া যায় ওয়াকিটকিও। এই নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর এই ওয়াকিটকিই বোয়ালিয়া থানা থেকে খোয়া যায়।

এই ছিনতাইকারীর নাম মাভেল ইসলাম (২৪)। তাঁর সঙ্গে ধরা পড়ে তাঁর ভাই নেহাল ইসলাম ওরফে নিরো (২২)। তাঁদের বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহমখদুম থানার বড়বনগ্রাম বাগানপাড়া এলাকায়। পুলিশ বলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর তাঁরা এখনো কারাগারে।

৩০ জানুয়ারি তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার এই রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে তা হয়নি।

ছিনতাইকারীর হাতে ওয়াকিটকি সেট পাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ওয়াকিটকি–সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের জন্য বোয়ালিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

ওয়াকিটকি সেট খোয়া যাওয়ার বিষয়টি থানায় জানাজানি হলেও এ নিয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি। ওসি নিবারনকে সম্প্রতি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। তাঁর পোস্টিং এখন এপিবিএনের ৬ ব্যাটালিয়ন, খাগড়াছড়ির মহলছড়িতে। সেখান থেকেই বুধবার রাজশাহীতে তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নিবারন বললেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি, জানি না।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওয়াকিটকি সেটটি যেদিন খোয়া যায়, সেদিন সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এটি বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ফেরদৌসের নামে বরাদ্দ ছিল। তিনি ডিউটি শেষে ওয়ারলেস অপারেটর আবদুল আউয়ালের কাছে বুঝিয়ে দেন। একই সময় ডিউটি বদলের সময় আউয়াল সেটি বুঝিয়ে দেন আরেক অপারেটর মো. আমানের কাছে। তারপর ওয়াকিটকিটি কীভাবে ছিনতাইকারীর কাছে গেছে, সে রহস্যেরই জট খুলছে না।

জানতে চাইলে আমান বলেন, তিনি রাত আটটায় ডিউটি শেষ করে ওই ওয়াকিটকি সেট আবার আওয়ালের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কি না, তা মনে করতে পারছেন না। পুলিশ ধারণা করছে, এসআই মনিরুল সেটটি বেলা দুইটায় আওয়ালের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে থাকলে তারপর থেকে রাত আটটার মধ্যে সেটটি খোয়া যেতে পারে। বোয়ালিয়া থানার করিডরের ওই সময়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এ ক্ষেত্রে তদন্তে কাজে আসতে পারে।

আমান আরও বলেন, যাঁর কাছে সেট পাওয়া গেছে, তিনি একজনের নাম বলেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্ত হলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

বোয়ালিয়ার সাবেক এসআই মনিরুল এখন আরএমপির মতিহার থানায়। তিনি জানান, ১১ সেপ্টেম্বর গণটিকার ডিউটি শেষ করে এসে তিনি ওয়ারলেস অপারেটর আউয়ালের কাছে ওয়াকিটকি সেট বুঝিয়ে দেন। এরপর আউয়াল আরেক অপারেটর আমানের কাছে ডিউটি হস্তান্তর করেন। তারপর কী হয়েছে, তিনি জানেন না।

তদন্ত কমিটির প্রধান আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলী ছুটিতে থাকার কারণে এই বিষয়ে এখনই কোনো কথা বলতে চাননি।-সূত্র : প্রথম আলো

এএইচ/এস