আয়নাবাজির ডিজিটাল পাইরেসি: ঠেকানোর উপায় কী

সিল্কসিটিনিউজ বিনোদন ডেস্ক:

বাংলাদেশে বেশ ব্যাবসাসফল একটি চলচ্চিত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেয়ার পর তা ব্যাপকহারে পাইরেসি হচ্ছে।

 

প্রায় মাসখানেক আগে মুক্তি পাওয়া ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করাসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডাউনলোডের জন্যও পাওয়া যাচ্ছে।

 

ঢাকার একটি প্রেক্ষাগৃহ ব্লকবাস্টারের কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলছেন, মুক্তির পর থেকে চলচ্চিত্রটির প্রায় প্রতিটি প্রদর্শনীই ছিল হাউজফুল।

 

কিন্তু কয়েকদিন আগে চলচ্চিত্রটি একটি মোবাইল কোম্পানির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করার পর এটি ব্যাপকহারে পাইরেসি হতে শুরু করে। এরপর থেকে প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও দর্শকসংখ্যা বেশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।

 

শুধু চলচ্চিত্র নয় বিভিন্ন সময়ে বারবার গান, নাটক এবং বই পাইরেসির অভিযোগ এসেছে।

 

পাইরেসির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যে দূর্বলতা রয়েছে সেটি স্বীকার করেই বাংলাদেশ কপিরাইট দপ্তরের রেজিস্টার জাফর আর চৌধুরী বলছেন, এনিয়ে আইনের সীমাবদ্ধতা এবং সচেতনতার অভাব দুটোই রয়েছে।

 

মি. চৌধুরী বলছিলেন, ১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭ টি চলচ্চিত্র কপিরাইট নিবন্ধিত হয়েছে। ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটিও কপিরাইট দপ্তরে নিবন্ধিত নয় এবং গান বা নাটকের ক্ষেত্রেও কপিরাইট নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম ।

 

“কপিরাইট আইনের আওতায় ২০১০ সালে একটি টাস্কফোর্স রয়েছে। শুধুমাত্র অভিযোগ পেলেই আমরা এনিয়ে অভিযান চালাতে পারি। কিন্তু আপনি যদি কপিরাইট নিবন্ধনই না করেন, তাহলে আমরা স্বত:প্রণোদিত হয়ে কিভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি?” প্রশ্ন করেন মি. চৌধুরী।

 

পাইরেসির সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব সঙ্গিত শিল্পীরা এবং এনিয়ে তারা দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলনও করেছেন।

 

সঙ্গিতশিল্পীদের অনেকে এখন অনেকেই শুধুমাত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই গান প্রকাশ করেন এবং সেখানে তাদের পাইরেসির কবলেও পড়তে হয়।

 

পাইরেসি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত এবং এনিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলছিলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে কিংবা কখনো নিজ থেকেই তারা পাইরেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তবে প্রযুক্তিগতভাবে কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং বলেও উল্লেখ করেন মি. রহমান।

 

তথ্য-প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলছিলেন, মানুষ যেখানে পাইরেটেড কন্টেন্ট ডাউনলোড করে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সেখানে আইনের প্রয়োগ ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণে আর কোন উপায় নেই।

 

“প্রযুক্তিগতভাবে যত জিনিসই আপনি বের করেন তার পরদিনই দেখবেন সেটা ভাঙ্গার জন্য প্রযু্ক্তি চলে এসেছে এবং সেটা দিয়ে ডাউনলোড হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার”। বলেন মি. স্বপন।

 

কপিরাইট দপ্তর বলছে, মেধাসত্ব বা কপিরাইট এবং নির্মাতা বা শিল্পীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় আইনের দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আইন সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া এখন চলছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা