শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

‘আমি সবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিয়েছি’ ইউক্রেনে আটকা রাজশাহীর সাকিল

Paris
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

রফিকুল ইসলাম:

‘ভাই আমি সবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিয়েছি। আপনিও আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন কোনো ভুল করলে হয়তো এমন হতে পারে এই ম্যাসেজই শেষ ম্যাসেজ।’ অনেকটা বিমর্ষ আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নূরুল আমিন শাকিল নামের বাংলাদেশী এক ইউক্রেন প্রবাসী। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়। বছর খানেক আগে পড়া-শোনার জন্য তিনি ইউক্রেন যান। এর পর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বসবাস করছিলেন তিনি। কিন্তু কিয়েভে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বোম্বিং শুরু করে রাশিয়া। এর পর আতঙ্কে কিয়েভের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শাকিলও ঘর ছেড়ে গাড়িতে উঠে পালাতে শুরু করেন। বাংলাদেশ সময় বিকেল ছয়টার দিকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা শাকিলের। তখন কিয়েভে দুপুর দুইটা।

শাকিল জানান, তাঁরা কিয়েভ শহর ছেড়ে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের শহরের দিকে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে আশ্রয়ের খোঁজে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু পথে গাড়ির চাপে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তাঁদের বহনকৃত গাড়ীও খুব জোরে এগুতে পারছে না। সবাই পালাচ্ছে যে যার মতো যানবাহনে চড়ে। রাশিয়ান বাহিনী যেভাবে হামলা করছে, তাতে রাস্তায় যানবাহনের ওপরও যে কোনো সময় বোমার আঘাত হানতে পারে। এই আতঙ্কে আতঙ্কিত শাকিল। তাঁর মতো ৫ শতাধিক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ইউক্রেনে আটকা পড়েছে বলেও দাবি করেন শাকিল। আর সবমিলিয়ে প্রায় ১৫শ বাঙ্গালী থাকেন ইউক্রেনে। তারা সবাই আটকা পড়েছে। অনেকেই রেড জোনে আটকা পড়েছেন। তারা আর বের হতে পারছে না।

শাকিল বলেন, ‘আমারা তিন ঘন্টা ধরে শহরের মধ্যেই আটকা পড়ে আছি। যানজটের কারণে গাড়ি বের হতে পারছে না। আবার বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড সীমান্ত খুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও সে দেশের বাংলাদেশী অ্যাম্বাসী এই ধরনের কোনো তথ্য দিতে পারছে না। ফলে আমরা চরম আতঙ্কে আছি।’

ইউক্রেনের খারকিভ শহরে থাকেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি মাত্র এক মাস হলো সেখানে গেছেন পড়া-শোনা করতে। মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই শহরের অধিকাংশ দখল করে নিয়েছে রাশিয়ান সেনারা। তারা বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে একযোগে খারকিভ শহর, কিয়েভ, বরিস্পল, মরিপল, ওডেসারে হামলা করে। এর পর থেকে শহরের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছে। ওই শহরের অন্তত ৫০ জন মানুষ মারা গেছে। যার মধ্যে সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ জন এবং ঘরবাড়িতে হামলার কারণে মারা গেছে অন্তত ১০ জন সাধারণ মানুষ। এই ধরনের তথ্য তাঁরা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন।’

মিজানুর রহমান খারকিভ শহরের একটি হাসপাতালের নিচে করা ইউক্রেন সরকারের বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আরও ১০-১২ জন বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা ও ইউক্রেনের কয়েকশ বাসিন্দা ওই বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন রাশিয়ান হামলা থেকে বাঁচতে। যুদ্ধের সময় ইউক্রেনবাসীকে বাঁচাতে এই বাঙ্কার তৈরী করা হয় বলেও জানান মিজানুর রহমান।’

তিনি আরও জানান, ‘ভারতসহ অন্যান্য দেশের নাগরীকদের সে দেশের এ্যাম্বাসী আগেই সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু বাংলাদেশের পোল্যান্ড এ্যাম্বাসী এটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শেষে যখন এ্যাম্বাসী থেকে ঘোষণা আসে যে ১৫ দিনের জন্য পোল্যান্ড স্টে ভিসা দিবে, তখন আর আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ ইউক্রেনের খারকিভসহ কয়েকটি শহরে বুধবার রাত ১২ টা থেকে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়। এখন চারিদিকে থমথমে অবস্থা। শহরের ফটকে ফটকে রাশিয়ান সোনারা তল্লাসি চৌকি বসিয়েছে বলে শুনেছি। তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।’

আরেক ছাত্র মাহবুব হোসেন বলেন, ‘১৫ দিনের স্টে ভিসায় পোল্যান্ড গেলে সেখান থেকে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর আমি লাখ লাখ টাকা খরচ করে পড়তে এসে এখন শেষদিকে দেশে ফিরে গেলে আমার আর কিছুই করার থাকবে না। তার চেয়ে এখানেই থেকে যাবো, মরি-বাঁচি।’

স/আর

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক