আমার ছেলের জীবনের দাম কি ৫ লাখ টাকা ?

শাহিনুল ইসলাম আশিক:

‘আমার ছেলে যদি মোবাইল চুরি করে তাহলে দেশে তো লোক আছে। তারা এর বিচার করবে। তারা আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যাবে বলে বাজারে নিয়ে গিয়ে দোকানের সঙ্গে ছাগলের মত করে ঝুলিয়ে তিন ভাই মিলে মেরেছে। এখন আবার মানুষ দিয়ে বলাচ্ছে ৫ লাখ টাকা দিবে। মিমাংশা করে নাও। আর ছেলে যদি মরে যেত। আমার ছেলের জীবনে দাম ৫ লাখ টাকা কি?। আমি কিছু বলতে পারবো না দেশের ১০ ভাই আছে তারা যা করেবে তাই হবে।’

 

আজ বুধবার বেলা একটার দিকে মুঠোফোনে সিল্কসিটিনিউজকে এসব বলছিলেন রাজশাহীর বাঘার নির্যাতিত শিশু মনিরুলের মা আবেদা বেগম।

 

তিনি বলেন, ‘আমি শুনিছি তারা নাকি পুলিশের লোক। পুলিশের লোক হয়ে ক্যান আমার ছেলেকে এমন করি মারলো। দেশে কি বিচার নাই। আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেনি। তারা প্রথমে এক হাজার টাকা দিতে চাই। আমার ছেলে বলে আমি টাকা নিবো কেন মোবাইলতো নিইনি। তাও তারা শুনেনি। তাও মারা ছেলেকে মেরেছে। রাতে অনেক বেথা করে। এখন ঠিক মত হাটতে পারে না। তারা পায়ের তালুতে অনেক মেরেছে। ’

 

এর আগে গত সোমবার মোবাইল চুরি সন্দেহে মনিরুল ইসলাম (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রকে দোকানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে তিন ভাই। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের মনিকা সিনেমা হলের সামনে। পরে মনিরুলকে বাঘা স্বাস্থ্য উপজেলা কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়।

 

এ ঘটনায় মনিরুলের মা আবেদা বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা করে। মামলায় অভিযুক্ত তিন ভাই হলেন, পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান, সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন ও ব্যবসায়ী মহিবুল আলম। পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমানকে এরই মধ্যে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

আবেদা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়িতে তেমন কেউ থাকে না। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। বড় ছেলেও চাকরির জন্য ঢাকায় গেছেন। তার পরে তো দেশে মানুষ আছে তাদের কাছে বিচার দেবে। তারা এর বিচার করবে। এলাকায় কেউ বলতে পারবেনা যে আমার ছেলে চুরির কোন রির্পোট আছে।

 

‘আমার এই ছেলেটার লেখাপড়ায় তেমন মন নেই। খালি এপাড়া ও পাড়া ঘুরে বেড়ায়। অন্যের জিনিসের প্রতি আমার ছেলের লোভ নেই। আর ওরা তো অন্য গ্রামের। তাদের তো আমি ও আমার ছেলে কোন দিন চিনি না। তারা মোবাইল চুরি সন্দেহে আমার ছেলেকে এভাবে বলেনতো এটা কি তারা ঠিক করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে মনিরুল।’

 

মনিরুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘সোমবার সকালে ব্যাডমিন্টন কোর্ট কাটতে নারায়ণপুর মাছ বাজারে বন্ধু শাওনকে ডাকতে গিয়েছিলাম। ওই সময় বাজারে মাছ কিনতে আসা জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। তারা মোবাইল চোর সন্দেহে আমাকে ধরে জিজ্ঞাসা করে আমি বলি পাইনি। তার পরে তারা বলে মোবাইলটা নে। আর সিমটা দে। তার পরেও আমি বলি আমি পাইনি তখন এক হাজার টাকা দিতে চাই।

 

মনিরুল আরো বলেন, ‘তারা তিন ভাই আমাকে থানায় নিয়ে যাবে বলে মোটরসাইকেলে তুলে মনিকা সিনেমা হলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মোবাইল ও ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী আনারুলের দোকানের সামনে ধরে রাখে। এরপর দড়ি দিয়ে আমার দুই পা বেঁধে ফেলে এবং মুখের ওপর কিল-ঘুষি মারে। এরপর একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটায়। সেখানে অনেক লোকজন এলে তারা প্রতিবাদ করে।’

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা ড. নীলুফার সুলতানা সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, সামাজি অস্থিরতা চলেছে সেটাই অন্যতম কারণ। অপরাধীরা অপরাধ করে পার পয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা মনে করছে তারা কোন অপরাধ করলে এর বিচার হবে না। তাই যেনে তারা অপরাধ করেছে।

 

তিনি আরো বলেন, মোবাইলটা একটা কমন জিনিস। এটা সবার কাছেই থাকে। তাই অপরাধীরা এই অপবাদ দিয়ে শিশুদের নির্যাতন করছে। আর কোন অপরাধী যদি বলে তার কাছে স্বর্ণের কোন জিনিস আছে তাহলে কোন মানুষ বিশ্বাস করবে না। তাই অপরাধীরা মোবাইল অপবাদ বেশি দিচ্ছি।

 

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, আসামীদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আর সেনা সদস্য ব্যপারে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

স/আ