আমাদের বাড়ি ছিল সেক্যুলার বাড়ি, সেই বাড়ি এখন হাদিস-কোরানের বাড়ি

আমাদের বাড়ি ছিল সেক্যুলার বাড়ি। শিল্প সাহিত্যের বাড়ি। সেই  বাড়ি এখন কট্টর মুসলমানের বাড়ি। হাদিস কোরানের বাড়ি। আমার বড় মামা  পাঁড় নাস্তিক তো ছিলেনই, নামী কমিউনিস্ট  ছিলেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই ধার্মিক। কেউ কেউ তো  পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে, বোরখা পরে। কেউ হজ্বে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।  আমার এক মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ধর্ম কর্মের ধার ধারতেন না। তাঁর সবকটা কন্যা শুধু বোরখা নয়, নিকাব,  হাতমোজা, পা-মোজা সবই পরে। আমার বাকি  মামারাও বদলে গেছে আমূল। যাদের সঙ্গে শৈশব কেটেছে, তারা  আমার নাম উচ্চারণ করাও মনে করে পাপ।

আমার কোনও সন্তান নেই। কিন্তু পরিবারে নতুন জেনারেশন বেশ আছে। আমার বড় দাদার দুই ছেলে। ছোট দাদার এক ছেলে এক মেয়ে। আর আমার বোনের এক মেয়ে। এরা কেউ কি আমার লেখা পড়ে? জানে আমি কী লিখি? না। জানার একফোঁটা আগ্রহ নেই কারো। আমার লেখা আমার বাবা মা, আমার দাদারা পড়তো। কেউ নেই এখন।  বোন পড়ে লেখা।  তাছাড়া  আত্মীয়স্বজনের বাইরের মানুষই পড়ে। তাদের অনেকে আমাকে জানে, বোঝে। তারাই আমার আপন।

-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে