‘আমাকে ধরলে আমার মতো আরও ১০০ জন আছে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সম্প্রতি বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন নামকরা সুপারশপ স্বপ্নের এক বিক্রয়কর্মী শরিফুল ইসলাম (৩৩)। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে শরিফুল অনেক তথ্য দিয়েছেন।

সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) শারমিন জাহান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল বলেন, ‘আমাকে ধরলে আমার মতো আরও ১০০ জন আছে, যারা এ কাজ করতে পারে। যতক্ষণ না ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা বদলাবে, ততক্ষণ এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

এদিকে বুধবার রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম কার্ড জালিয়াতির বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।

তিনি জানান, শরিফুলকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ১ হাজার ৪০০ ক্লোন কার্ড, গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি, ১৪টি পাসপোর্ট, দুটি মিনি কার্ডরিডার ডিভাইস, একটি পরচুলা, একটি কালো রঙের সানগ্লাস ও আটটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, ‘মিনি কার্ডরিডার’ যুক্ত ডিজিটাল হাতঘড়িটি প্রতারক শরিফুল ইসলাম চায়না থেকে নিয়ে আসেন। তিনি আরও জানান, তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি আইনে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেহেরপুর জেলার গাংনীর হেমায়েতপুরের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে শরিফুল গাংনী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রাশিয়ায় যান। সেখানে ইভানোভিচ নামে তার এক রুমমেটের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির কৌশল শেখেন। ২০১০ সালে দেশে আসার পরপরই কার্ড জালিয়াতিতে নেমে পড়েন শরিফুল।

মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, সুপারশপ স্বপ্নতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করার সময় বিশেষ ‘মিনি কার্ডরিডার’ যুক্ত একটি ডিজিটাল হাতঘড়ি ব্যবহার করতেন শরিফুল। সেটি দিয়েই বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের সব তথ্য নিয়ে নিতেন তিনি।

তিনি জানান, গত ১০ মার্চ ক্লোন কার্ড দিয়ে ঢাকার পাঁচটি ব্যাংকের অর্ধশত গ্রাহকের প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। পরে গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত হয় এবং তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

তদন্তে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। ব্যাংকের গ্রাহকেরা বিভিন্ন সুপারশপ ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার সময় ওই চক্রটি সুকৌশলে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে। পরে এর ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলে নেয়।

শরিফুল ইসলাম এ চক্রের মূলহোতা। তিনি সুপারশপ স্বপ্নের বনানী শাখায় কাজ করতেন। নিজের হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ ‘মিনি কার্ডরিডারের’ মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্য নিয়ে নিতেন।

তারপর গ্রাহক যখন পস মেশিনে পিন নম্বর দিত, তখন কৌশলে পিন নম্বর দেখে নিতেন এবং গ্রাহক বিল শোধ করে চলে যাওয়ার পর বিলের কপি রি-প্রিন্ট করে তার পেছনে পিন নম্বর লিখে রাখতেন।

পরে বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ ও ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন।

এটিএম কার্ড থেকে টাকা তোলার সময় শরিফুল বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতেন। পরচুলা ও কালো চশমা ব্যবহার করতেন তিনি।

সুপারশপ স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং আফতাবুল করিম তানিম, হেড অব সেলস মো. সামসুদ্দোহা শিমুল এবং মহাব্যবস্থাপক করপোরেট অ্যান্ড সেলস) মিজানুর রহমান লিটন সিআইডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তানিম সাংবাদিকদের বলেন, বানানী শাখার একজন গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন, পস অপারেটর শরিফুল ইসলাম গ্রাহকদের বিল পরিশোধের পর স্লিপে কিছু একটা লিখে রাখেন। ওই অভিযোগ পাওয়ার পর খোঁজ নিতে গেলে শরিফুল নিরুদ্দেশ হন। পরে স্বপ্নের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত দুটি মামলায় ১৮ মাসের জেলও খেটেছেন শরিফুল। এপর কিছুদিন শিক্ষার্থী কনসালটিং ফার্ম খোলেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে আবার জালিয়াতি শুরু করেন।