আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই বাংলাদেশে যাবো:পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী

জহুরুল ইসলাম মুন, পর্তুগাল প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য যে সময় শিল্পী জর্জ হ্যারিসন গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহ করছিলেন, সে সময় পর্তুগালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী  আন্তনিও কোস্টা বাংলাদেশের জনগনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে একটি সিডি কেসেট কিনেছিলেন। এমনটি বলছিলেন মধ্যাহ্ন ভোজের অনুষ্ঠানে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তনিও কোস্টা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ লিসবনের কেপভার্দে (আফ্রিকা) এসোসিয়েশনের হলরুমে এই মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।

এ সময় পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তনিও কোস্টাকে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও লিসবন সিটি কাউন্সিলর রানা তসলিম উদ্দিন বাংলাদেশ সফরের আহবান জানান। জবাবে আন্তনিও কোস্টা বলেন, “আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই যাবো। আমার বাংলাদেশ ভ্রমণ করার আগ্রহ আছে”।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সজিব গ্রুপের এ জি এম (এক্সপোর্ট) জিয়াউর রহমান নিপু, পর্তুগাল মাল্টিকালচ্যারাল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ উদ্যোক্তা মোঃরাসেল আহম্মেদ ও তরুণ প্রবাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তানভীর আলম জনি প্রমুখ।

১৯৭১ এর বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের পার্থক্য বুঝাতে গিয়ে রানা তসলিম উদ্দিন উল্লেখ করেন কিভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হল বাংলাদেশ এবং কিভাবে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে, কিভাবে ১০ লাখের বেশী রিফিউজি রোহিংগাদের আশ্রয় দিয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হল কিভাবে তার ও বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কথাগুলো তিনি আগ্রহ নিয়ে শুনেন ও প্রশংসা করে বলেন, “পর্তুগালেও আপনাদের কমিউনিটির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে”।

এ সময় পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটির গত ত্রিশ বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ব্যাখ্যা করা হয়। পর্তুগালের অর্থনীতিতে বাংলাদেশিদের অবদানের কথা এবং পর্তুগালে আমাদের জনসংখ্যার খতিয়ান জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন এবং নির্মাণাধীন মসজিদ নিয়েও কথা বলেন। আন্তনিও কোস্টা তৎক্ষণাৎ লিসবনের মেয়রকে ফোন করে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। তাছাড়া বাংলাদেশী পর্তুগিজ ভোটারদের সংখ্যা নিয়েও কথা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আন্তনিও কোস্টা তাঁর প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে পর্তুগালের ইমিগ্রান্টদের নিয়ে কথা বলেন, বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সারা দুনিয়া বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, বিবৃতি দেয়, কিন্তু আমি কাজ করে দেখাই, আমার শাসন আমলে নিগ্রোদের পার্লামেন্টে ঠাই দিয়েছি, জিপ্সিদের পার্লামেন্টে এনেছি। শারীরিক অক্ষমদের কেবিনেটে রেখেছি। যা পর্তুগালে কখনো ছিলনা।”

সবচেয়ে বিষ্ময়কর ব্যাপার ছিল, বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রান্টদের কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রথমেই বাংলাদেশের নাম উচ্চারন করেন, অথচ এখানে বিশ্বের প্রায় ১২০ টি দেশের মানুষ বসবাস করেন। ‍‍‍

আসন্ন ৬ অক্টোবর ২০১৯ পর্তুগালের নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী ১০/১২ জন প্রার্থী, দুই জন মিনিস্টার, সোস্যালিস্ট পার্টির উচ্চ স্তরের নেতৃবৃন্দ, পর্তুগালের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগন ও কেপভার্দে এসোসিয়েশনের সদস্যগনসহ পর্তুগালের বিভিন্ন জাতীয় টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দরা উক্ত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রানা তসলিম উদ্দিন বাংলাদেশী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ কমিউনিটির মুখপাত্র হয়ে, বাংলাদেশও এখানকার মানুষের কথা বলতে পেরে, নিজ দেশের অর্জন অন্যদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে পারারজন্য আমাদের কমিউনিটির কাছে, প্রধানমন্ত্রী  আন্তনিও কোস্টার কাছে, সর্বোপরি কেপভার্দে এসোসিয়েশনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।