আবাসিক প্রকল্পের টাকায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তাদের বিদেশ সফর!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একটি আবাসিক প্রকল্পের টাকায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যানসহ চার কর্মকর্তা গেছেন বিদেশ সফরে। আরডিএর এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস)ও। ইউরোপের তিন দেশে ১৫ দিনের এই সফরের খরচ হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। রাজকীয় এই সফর নিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল সংস্থা আরডিএর সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহীতে সচেতন মহলেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাদের বক্তব্য সরকার যেখানে উন্নয়ন তরাম্বিত করতে বাহুল্য ব্যয় পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে আরডিএর কর্মকর্তারা এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার রাজকীয় সফর করছেন। এই মাসেই আরডিএর আরেকটি দলের বিদেশ সফরের কর্মসূচিও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে আওতায় ২০১৫ সালে শতাধিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় আগ্রহীদের মাঝে। ৫ লাখ টাকা কাঠা বাজারমুল্যের জমি চড়াদামে প্লট আকারে (কাঠা প্রতি ১০ লাখ) বিক্রি করে আরডিএ বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন। কিন্তু প্রকল্প সম্পন্ন করে গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে দিতে এখনো বছর দুয়েক দেরি।

এদিকে প্রকল্প পুরোপুরি প্রস্তুতের আগেই বারনই প্রকল্পের টাকায় গত ৩ জানুয়ারি আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, নগর পরিকল্পক (টিপি) আজমেরী আশরাফী, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহিল তারিক ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ১৫দিনের ইউরোপ সফরে গেছেন। এই প্রকল্পের টাকায় তাদের সফরসঙ্গী হয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবের পিএস ( ব্যক্তিগত সচিব) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খানও।

সূত্র মতে, এই পাঁচজন বর্তমানে ইউরোপের তিনটি দেশ সফর করছেন। যুক্তরাজ্য সফর শেষে তারা বর্তমানে ইটালিতে রয়েছেন। শেষে তারা ফ্রান্স সফর করবেন। আরডিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ইউরোপের উন্নত তিনটি দেশের নগরায়ন কীভাবে ঘটেছে এবং নগরগুলির পরিকাঠামো ও জীবনমান দেখতেই তারা এসব দেশে সফরে গেছেন। ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে এসে তারা রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নে সেসব অভিজ্ঞতা বাস্তবে প্রয়োগ করবেন। রাজশাহীকে ইউরোপের ল-ন, রোম বা ফ্রান্সের আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।

এদিকে আরডিএর চেয়ারম্যানসহ ৫ জন ইউরোপ থেকে ফেরার পর একই প্রকল্পের টাকায় আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ( যুগ্ম-সচিব) ড. দেওয়ান মোহাম্মদ শাহরিয়ার, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ ও বারনই আবাসিক প্রকল্পের প্রকল্প (পিডি) পরিচালক ও সহকারি প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তাসহ মোট ৫ জন আগামি ২৩ জানুয়ারি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফরে বের হবেন। তারাও ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত শহরের নগরায়ন দেখবেন। দেশে ফিরে রাজশাহীর নগরায়ন করবেন ইউরোপের আদলে। তবে প্রকল্পের টাকায় আরডিএর কর্মকর্তাদের এসব ম্যারাথন সফর নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবাধ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কারোরই মুখ খোলার সাহস নেই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বজলুসহ সংস্থার ৪ কর্মকর্তা ছাড়াও পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১৫দিনের সফর করেন। ওই সফরেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরডিএর টাকায় বিদেশ সফরে যান। সেই সফরের ব্যয়ও প্রকল্পের টাকা থেকে মেটানো হয়। সেবারও অপ্রয়োজনীয় এসব সফরের বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারিরা ভেতরে ভেতরে ক্ষুদ্ধ হলেও চেয়ারম্যানের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।

তবে বজলুর রহমান বজলু বিদেশ সফরে থাকায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. দেওয়ান মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বারইন প্রকল্পের কর্মসূচিতে বিদেশ সফরের সংস্থান রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই তারা বিদেশ সফর করছেন। ব্যয়বহুল এসব সফরের বাস্তব উপযোগীতা কি জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, উন্নত দেশের নগরায়ন দেখে এসে রাজশাহী নগরীর উন্নয়নে সেইসব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটানো।

স/আর