আপনারা কী ডাক্তার? আপনারা ট্রিটমেন্টের কী বুঝেন: মওদুদকে আদালত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। বৃহস্পতিবার জামিন শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীদের বাকবিতন্ডা হয়। আদালতের সঙ্গে বিএনপির আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক হয়। একপর্যায়ে আদালত কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বলেন, আপনারা কি ডাক্তার? ট্রিটমেন্টের আপনারা কী বুঝবেন। আদালত সংশ্লিষ্ট সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার দু’দফা শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। এর ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি আপাতত হচ্ছে না।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ফারুক হোসেন প্রমুখ।

বিএসএমএমইউর দেয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, হাইপার টেনসন, অ্যাজমা, ব্যাকপেইন, আর্থ্রারাইটিজ সমস্যা আছে। তবে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু আর্থ্রারাইটিজ ও ব্যাক পেইনের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন পুশ করা দরকার। অন্য সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অস্টিও-আর্থ্ররাইটিসের ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ শুরুর বিষয়ে তিনি সম্মতি দেননি। এমনকি সেই চিকিৎসকার জন্য যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, সেগুলোও করা যাচ্ছে না। এ সময় আদালত বলেন, আমরা এখন আদেশ দেব।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী আ্যডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের একটু আবেদন রয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) কেন অনুমতি দেননি তা জানা দরকার। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমরা তার কাছে জানব কেন তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন না।

জবাবে আদালত বলেন, এটা আমরা দিতে পারি না। এর কোনো সুযোগ নেই। আমরা আদেশ দিচ্ছি। এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, এখনই আদেশ দেবেন না, আমাদের জানা দরকার কেন তিনি চিকিৎসা নেবেন না। প্লিজ আমাদের অনুমতি দিন। জবাবে আদালত বলেন, এটি আমরা দিতে পারব না। আমরা আদেশ দেব।

এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যে মেডিসিন পুশ করার কথা বলা হচ্ছে তা বিদেশি ওষুধ। তা পুশ করার পর কী রি-অ্যাকশন হবে সেটি দেখা দরকার। এ সময় আদালত বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কী এক্সপার্ট? তিনি কী ডাক্তার? তিনি কীভাবে বুঝবেন?

আদালত বলেন, আমরা চিকিৎসার জন্য দরকার হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কনসান নিয়ে চিকিৎসা করি। আমাদের একজন বিচারপতি প্যারালাইজড হয়ে গেছেন, তিনিও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। কিন্তু যাওয়ার আগে ঢাকা মেডিকেলে ডাক্তারের কনসান নিয়ে গেছেন।

এ সময় মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের দেখা করে জানা দরকার। আদালত বলেন, আপনারা কী ডাক্তার? আপনারা জানেন ট্রিটমেন্ট কী? এ সময় আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের বারবার আপনাদের কাছেই আসতে হয়। আমাদের সবকিছু বন্ধ করবেন না। আমাদের একটু অনুমতি দেন। আর এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য রাখেন। এ সময় আদালত বলেন, আমাদের একটি প্ল্যান আছে। কোর্টের নিজস্ব প্ল্যান থাকে। সেই অনুযায়ী কোর্ট চলে।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দিয়েছে। তিনি যদি চিকিৎসার অনুমতি না দেন তা হলে মেডিকেল বোর্ডের কী করার আছে? উনার সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, ব্যাক পেইন ও আর্থ্রারাইটিজ সমস্যা রয়েছে। ঠিক আছে আমরা আদেশ দিই। পরে আবার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, দুপুর ২টা রাখেন। পরে আদালত জামিনের আদেশের জন্য বেলা ২টা রাখেন।

বেলা ২টার পর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দুটি সম্পূরক আবেদন দেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষ শুনানি করেন। শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে হাইকোর্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়েছেন। তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। তখন আদালত বলেন, নওয়াজ শরিফকে দেশের ভেতরে চিকিৎসার শর্তে জামিন দেয় আদালত। তিনি দেশের ভেতরে চিকিৎসা নেন। আর পাকিস্তানের উদাহরণ এখানে টানবেন না।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়াকে (রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস) ওষুধ দিতে চাইলে তিনি নিতে চান না। এত ভয় কিসের? এই মেডিসিন খেয়ে মানুষ যদি মরে যেত তা হলে তো ওষুধ বাজারজাত হতো না। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়া জামিন বিষয়ে আপিল বিভাগ একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। কারণ আপিল বিভাগের আদেশ মানা বাধ্যতামূলক।

শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য সম্মতি দেননি। যেহেতু খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত সম্মতি দেননি তাই উন্নত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতে অনুমতি মেলেনি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন চেয়ে এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এমন তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া জামিন পাননি।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন। আপিল বিভাগের ওই রায়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার পদক্ষেপ নিতে।

সেই রায় ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদন করার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।