আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বাগমারায় চলছে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে ফসলি জমিতে পুকুর বা দিঘি খনন অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষি জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়ছে বলে এলাকার কৃষকরা দাবি করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালীরা আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন অব্যাহত রাখলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক ভাবে নিরব ভুমিকা পালন করছে। তবে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিউল ইসলাম দাবি করেছেন।

জানা গেছে, এলাকায় একটি প্রভাবশালী মহল খাল, দাড়ি ও বিলে ফসলে জমিতে ফ্রি স্টাইলে যত্রতত্র পুকুর খনন করে মাছ চাষের নামে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন অব্যাহত রেখেছেন। এতে বর্ষা মওসুমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি অকেজো ভাবে পড়ে থাকছে। অপরদিকে ফসলি জমির পরিমান কমছে। আদালতের নির্দেশ রয়েছে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। প্রভাবশালীরা এ নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন অব্যাহত রাখলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক নিরব ভুমিকা পালন করছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। ব্যবসার নামে পানি প্রবাহের নালায় পুকুর করায় ব্রীজ, কালভাট ও স্লুইজ গেট অকেজো হয়ে পড়ছে। পানি বদ্ধতায় বর্ষায় ফসলি জমির আবাদ নষ্ট হলেও তাদের দুরাবস্থায় কেউ এগিযে আসছে না বলে কৃষকরা দাবি করেন।

প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে নিয়ম বর্হিভূত অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য দফায় দফায় ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত আবেদন করেছেন। এতে কোন সুফল মিলছে না বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।

তারা জানান, উপজেলার, গোয়ালকান্দি, মাড়িয়া, গণিপুর, বড়বিহানালী ও দ্বীপপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে অবৈধ পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।

গণিপুর ইউনিয়নের দুবিলায় ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের যশোর বিলের ধারে কনোপাড়া, বাজে গোয়ালকান্দি, মাধাইমুড়ি, আক্কেলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের নীচু এলাকার পানি প্রবাহিত জায়গা বন্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিল খালে অপরিকল্পিত নতুন নতুন পুকুর খননের ধারাবাহিকতায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী সুবিধা ভোগীরা ফসলের এই নীচু জমিতে কিছু পরিমান খুড়ে খননকৃত পুকুরের চারিধারে মাঠি দিযে বাঁধ দিয়ে গভীর নলকূপ নিয়ে পানি জমা করে দেদারছে মাছ চাষ করছে। লাভ পেয়ে মহল বিশেষে সর্বত্র এলাকায় এই ব্যবসা ছড়িয়ে ফেলছে।

অভিযোগকারী উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের খলিলুর রহমান, মোহম্মাদ আলী, বাজে গোয়ালকান্দি গ্রামের আফজাল হোসেন, আনিছুর সরদার, সাইফুল ইসলামসহ অর্ধশত কৃষক জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দাড়িতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যবসার নামে পানি প্রবাহিত দাড়ি (খালে) বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ও আরো ওই এলাকায় ৫টি পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে বলে ওই এলাকার কৃষকরা দাবি করেন। একই ভাবে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা ও যশোর বিল প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবাদি জমিতে মৎস্য চাষের জন্য অবৈধ পুকুর খনন কাজও অব্যাহত রেখেছে।

গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা গ্রামের কাউছার আলী ও আশরাফুল ইসলাম এবং গনিপুর ইউনিয়নের এনতাজ আল, আলাউদ্দিনসহ একাধিক পুকুর ব্যবসায়ী প্রভাবশালী সার্থন্বেষী মহল স্থানীয় কয়েকজনের জমি লীজ নেয় খনন শুরু করেছে। পরে অন্যদের সন্মতি না নিয়ে জমি দখল করে পুকুর খনন সম্পূর্ণ করছে। জমির মালিকেরা বাধাঁ দিলে তা বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে কৃষি জমিতে একের পর এক পুকুর খননেন বিলের অন্যান্য জমিগুলো হুমকির মুখে পড়ছে । অন্যদিকে আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। অবৈধ পুকুর বন্ধের লোক দেখানোর নামে প্রশাসনিক ভাবে অভিযান চালালে কার্যত তা দৃষ্টি এড়িয়ে রাতের অন্ধকারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

এদিকে কৃষি জমিতে পুকুর বা দিঘি খনন না করার ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে জালাল উদ্দিন নামে এক সুপ্রীম কোটের আইনজীবি রিট পিটিশন করে। পরে আদালত এসব বন্ধের নিয়মিত ভ্রাম্যমান পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে পুকুর খনন বন্ধের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবৈধ পুকুর খনন লোক চক্ষু আড়াল করে কাজ অব্যাহত থাকছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্কিয়তা আদালত অবমাননার সামিল বলে আইনজীবি জালাল উদ্দিন (উজ্জ্বল) দাবি করেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিউল ইসলাম বলেন, অপরিকল্তি ভাবে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত দুই দিন আগে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে অভিযান করে যশোর বিলে পুকুর খননের ৩ টি ভেকু গাড়ির চাবি নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

স/অ