আত্রাইয়ে বোরো চাষে ব্যস্ত চাষীরা

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই প্রতিনিধি:
বোরো চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কৃষকরা। কয়েক দিনের শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বোরো আবাদ রোপনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আর শীতের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুতে পানি সেচ আর হাল চাষ চলছে। দিন ভর ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। আর এসুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্খিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চাষিরা বলছেন শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমতো থাকলে সুষ্ঠ ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চলতি মৌসুমে ১৮ হাজর ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাত, হাইব্রীড জাত। উপজেলার কিছু এলাকায় ধানের পরিবর্তে গম, ডাল, ভুট্টা ও সরিষার আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। বোরো চাষে মাঠে মাঠে জমিতে পানি সেচ ও হাল চাষে ব্যস্ত চাষীরা। শীতের ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। অন্যদিকে তৈরী জমিতে চারা রোপন করা হচ্ছে।

এদিকে বোরো আবাদের সময় শ্রমীক সংকট দেখা দেয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘা প্রতি ৯০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তি দিচ্ছেন চাষীরা। আবার অনেকে ৩০০ টাকা দিনমজুরি দিয়েও শ্রমিক নিচ্ছেন। গত কয়েকদিনের শৈত প্রবাহের ফলে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াাশায় বোরো বীজতলার কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বরিশস্য জমিতে আবাদের জন্য বীজতলার বীজ হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা গেছে। এতে করে কৃষকদের কিছু সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে। শীত আর কুয়াশায় বোরো আবাদে সমস্যা হতে পারে এজন্য অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে রোপনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

উপজেলার মদনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মো: সেকেন্দার আলী বলেন, আমি এবার প্রায় ২২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি কিন্তু প্রচন্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেনা। মজুরি বেশি দিয়েও চাহিদা মোতাবেক কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি বছর যে সময় জমিতে চারা রোপন করা হতো। শীতের কারণে এখন কয়েকদিন পিছিয়ে গেছে।

উপজেলার আটগ্রাম গ্রামের কৃষক মো: আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এ বছর প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। জমিতে চারা রোপন পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রচন্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে চাচ্ছেন না। দেরি করে আবার জমি রোপন করা শুরু করলে কাজের চাপে শ্রমিকও পাওয়া যাবে না। যার কারণে একটু আগেই মজুরি বেশি দিয়ে কাজ করে নিতে হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আবহাওয়া ভাল থাকলে ফসলও ভাল হবে। আর ভাল ভাবে ঘরে উঠাতে পারব।

উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক মো: আজাদ আলী সরদার বলেন, এখন বোরো আবাদের মৌসুম। সবাই জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত। কিছুদিন আগেও সব সারের দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কৃষকরা যখন বোরো চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছে এসুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ সবধরনের সারের দাম বস্তা প্রতি ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য আমার মতো অনেক কৃষকরাই জমি চাষাবাদে সমস্যায় পড়েছি। অথচ বাজারে পর্যাপ্ত সার আছে।

এ ব্যাপারে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শলিয়া ও কালিকাপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কে এম মাহাবুব জানান, এবার তীব্র শীতের কারণে বোরো রোপণ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্যমুল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি আরো বলেন কৃষকদের বীজতলা যেন নষ্ট না হয় এ জন্য কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া এবং বীজতলায় রাতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে রেখে সকালে সেই পানি বদলে আবার নতুন পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ছত্রাকনাশক থিয়োভিট পাউডার ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাউছার হোসেন বলেন, শৈত প্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রোবো চাষ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অতিরিক্ত শীতের মধ্যে জমিতে চারা রোপন না করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে চারা মরার হারটা বেড়ে যায় এবং কিছু বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। শীতের হাত থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকদের পলিথিন ব্যবহার করতে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। চারা জমিতে লাগানোর পূর্বে কিছুটা ইউরিয়া ও থিয়োভিট পাউডার স্প্রে করতে হবে। এতে চারা দ্রুত সতেজ হয়ে উঠবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ শত হেক্টর জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সার পর্যাপ্ত থাকার পরও যদি অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে অনিয়ম করে দাম বেশি নিয়ে থাকে। তবে কৃষি বিভাগ থেকে মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

স/আ