আত্রাইয়ে বিলুপ্ত হতে চলেছে পাতি চাষ

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই:

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিলুপ্ত হতে চলেছে পাতি চাষ। এক সময় ব্যাপক হারে এ পাতিচাষ আকৃষ্ট করেছিল কৃষকদের। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কাছে মাদুরের (বিছানা) চাহিদা কমে যাওয়ায় মাদুর তৈরির পাতিচাষেও কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

জানা যায়, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা ও পার্শ্ববতী রাণীনগর উপজেলা এক সময় মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। এমনকি বিভিন্ন হাটবাজারে আত্রাইয়ের চাপড়াগ্রামের মাদুরের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ জন্য ওই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে মাদুর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত শত শত পরিবার। আর এসব মাদুর তৈরির জন্য চাষ করা হতো পাতির। যা এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতের মাদুরে বাজার সয়লাব হওয়ায় পাতির মাদুরের চাহিদা কমে যায়। ফলে এলাকায় পাতি চাষও হ্রাস পায়। তার পরও অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও কিছু কৃষক চাষ করছেন পাতির।

এ ব্যাপারে উপজেলার চাপড়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আগে পাতি এলাকার অনেক কৃষক চাষ করত। পাতিচাষে লাভও আছে ভালো। কিন্তু এর পরিচর্যা করতে হয় বোরোর তুলনায় অনেক বেশি। এ জন্য অধিক পরিচর্যার ঝামেলা এড়াতেই মূলত এ পাতিচাষ এলাকায় কমে গেছে। এছাড়া পাতি দিয়ে তৈরি মাদুরের কদর কমে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলার বহলাগ্রামের মো: আব্দুল খালেক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, উপজেলার মধ্যে আমাদের এ অঞ্চল পাতিচাষের বিখ্যাত ছিল। আর এখানকার পাতির তৈরি মাদুরও ছিল দেশজুড়ে সমাদৃত। এখন মাদুর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়া, পরিদপুর, রাজবাড়ি, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হতো। ওই এলাকায় এসব মাদুরের মোকাম ছিল যেখান থেকে মাদুরগুলো বিভিন্ন হাটবাজারে বাজারজাত করা হত। বর্তমানে আগের মতো চাহিদা না থাকায় মাদুর তৈরির পেশাও প্রায় সকলেই ছেড়ে দিয়েছে। সেই সাথে পাতির চাষও কমে দিয়েছে।
এখন অনেকটাই এ চাষ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

এ বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলার ভবানীপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: শফি উদ্দিন আহম্মদেও সাথে কথা বললে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে জানান, আমাদের আত্রাই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই এক সময় ব্যাপক পরিমাণ পাতি চাষ করা হতো যা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এখন কৃষক ইরি-বরো চাষের পাশাপাশি গম, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন প্রকার আবাদ করে থাকে এবং তারা অনেক লাভোবান হচ্ছে। তাই দিন দিন পাতি চাষে তারা আগ্রহ হারাচ্ছে।

এ ব্যাপাকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এক সময় হাতে তৈরি মাদুরের ব্যাপক চাহিদা ছিলো যা বর্তমানে নেই। পাতির চাষ যদিও লাভজনক কিন্তু এর সঠিক পরিচর্যা না হলে ফলন হয় না। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুলনামূলক যেহেতু হাতে তৈরি মাদুরের চাহিদা কমে গেছে এবং বোরো চাষেও কৃষকরা এখন ব্যাপক লাভবান হচ্ছে এ জন্য এলাকার কৃষকরা পাতি চাষ ছেড়ে দিয়ে বোরো চাষে ঝুঁকে পড়ছে।

স/অ