আঠারো নেমেছে রাস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসহ সেরা দেয় যে উঁকি।’ সুকান্ত’র ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার শেষ লাইন- ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’। সত্যিই যেন এ দেশের বুকে আঠারো নেমে এসেছে। আঠারোর পদধ্বনি শুনেছে বাংলাদেশ। দেশের কোমলমতি সন্তানরা, যারা রাজনীতির অ-আ-ক-খ কিছুই বুঝে না। তারাই নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশ। বিবেকের বন্ধ দরজায় কড়া নেড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে।

রাজধানীর কুর্মিটোলায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মাঠে নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই চলমান ছাত্রবিক্ষোভ রূপ নিয়েছে আন্দোলনে। ছড়িয়েছে রাজশাহীতেও। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় শত শত শিক্ষার্থী নয় দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মানববন্ধনে অংশ নেন। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষর্থীরা অংশগ্রহণ করে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। শিক্ষার্থীরা সঙ্গে নিয়ে আসে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাইরে’, ‘নিয়ে যা তোর স্বাধীনতা, ফিরিয়ে দে আমার ভাই বোনের জীবন’, সড়কে আর লাশ নয়, নিরাপদ সড়ক চাই’,  ‘বায়ান্নতে লড়েছি ভাষা বাঁচাতে, এবার লড়ছি জীবন বাঁচাতে’, ‘তুই ড্রাইভার নাকি খুনি’, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি চুপ কেনো ?’ আর কত লাশ দেখতে চান’ আশ্বাস নয়, বিচার চাই’, ‘স্বার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে, গাড়ি চাপায় মানুষ মরে মন্ত্রী সাহেব হাসে।’

আন্দোলনরত রাজশাহীর একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, সুষ্ঠুভাবে তাদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। এছাড়া সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হয়। দুপুরের পরে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যায়। এসময় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তার বক্তব্যে বলেন, আমি একজন মা বলছি, তোমরা সীমা লংঘন করোনা, আইনের বাইরে যেও না, আমার অন্তর জ্বলছে, আমার সন্তান কোথায়? ‘আমি তোমাদের হারাতে চাই না। আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।

সাহেববাজার এলাকায় কথা হয় সাইদুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে নয়দফা দাবিগুলো নিয়ে রাস্তায় নেমেছে তার গুরুত্ব আছে। শুধু বাংলাদেশে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায়। বিশ্বের অন্য দেশেগুলোতে বছরেও এতো মানুষ মারা যায়না। তিনি বলেন, এই শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তায় পড়ে থাকা কাঁচগুলো ঝাড়ু–দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। আর তারা পুলিশের কাজও করছে। তারা রাস্তায় চলা গাড়িগুলোর কাগজ দেখেছে। এটা আসলে পুলিশের দায়িত্ব ছিলো। মুক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, দুর্ঘটনার কথা শুনে একজন মন্ত্রী কেনো হাসবে। তার দুঃখ করা উচিৎ। দেশের এই খাতটিতে অশিক্ষিতের হার অনেক বেশি। বেশির ভাগ ড্রাইভার অষ্টম শ্রেণির নিচে। তারা ক্লাস টু-থ্রি (দ্বিতীয় ও তৃতীয়) শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। এর মধ্যে গাড়ি ধোয়া মোছা করতে করতে ড্রাইভার হয়ে গেছে অনেকেই।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ করেছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ রাজশাহীর সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক আহসান টিটো বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাদের আন্দোলনের মধ্যমে সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে নিরাপদ সড়ক কতোটা জরুরী। তাদের এই আন্দোলনকে সাধুবাদ জানাই।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে জরুরী সভা করা হয়। নিরাপদ সড়কের দাবির নামে সহিংসতা করতে ছাত্ররা যাতে রাস্তায় না নামে সে লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

এ সময় নগরীর কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভ. ল্যাবরেটরী স্কুল, রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী কলেজ, মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষসহ নগরীর বিভিন্ন স্কুুল-কলেজ প্রধান শিক্ষকরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে এ সময় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার আবু আহাম্মেদ আল মামুনসহ শিক্ষা কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, রাজশাহীর মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। কোনো ধরণের উস্কানীতে সাড়া দিয়ে কেউ যাতে রাস্তায় না নামে এজন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি কেউ নিরাপদ সড়কের নামে নাশকতা করে বা উস্কানী দেয় তবে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।

এসময় তিনি আরো বলেন, ছাত্রদের সব দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেনে নিয়েছেন। রাজধানীতে বাস চাপায় নিহত পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। ঘাতক বাস ও চালকসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আনাতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

স/শা