সোমবার , ৬ জুলাই ২০২০ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আট মাসের সন্তান বুকে বেঁধে বেঁচে থাকার সংগ্রাম জরিনার

Paris
জুলাই ৬, ২০২০ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

রোববার, দুপুর আনুমানিক দেড়টা। একটু আগেই ঝুম বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে গেছে। রাজধানীর নীলক্ষেতের অদূরে নিউ মার্কেট এক নম্বর গেটের ছাউনির পাশে কয়েকজন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

একসময় বৃষ্টির গতি কমে আসে। মার্কেটের সামনের রাস্তার বিপরীত দিক থেকে কাকভেজা হয়ে মুখে মাস্ক পরিহিতা এক তরুণীকে ছুটে আসতে দেখা যায়। রঙিন প্রিন্টেট সালোয়ার কামিজ পরিহিতা ওই তরুণীর হাতে এক বান্ডিল লুছনি। বৃষ্টি থামার জন্য সেখানে অপেক্ষমান যারা ছিলেন তাদের কাছে গিয়ে লুছনি কেনার জন্য বারবার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন ওই তরুণী।

jarina

হঠাৎ করে এ প্রতিবেদকের চোখে তরুণীর শারীরিক গড়নে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হলো তরুণী হয়তো অন্তঃস্বত্তা। কিন্তু ভালো করে লক্ষ করতে দেখা গেল শরীরের একপাশ গলা থেকে পেট পর্যন্ত অনেকটা ফোলা। কৌতূহলবশত সামনে এগিয়ে যেতেই তরুণীর পেটের দিকে ছোট একটি শিশুর পা বের হয়ে থাকতে দেখা যায়। তরুণী তার শিশুসন্তানটিকে বিশেষ কায়দায় গলায় ও বুকে বেঁধে রেখেছেন।

তার নাম জরিনা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে লুছনি বিক্রিই তার পেশা। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা জরিনার স্বামী একজন রিকশাচালক। তিন সন্তানের জননী জরিনা দীর্ঘদিন ধরে নিউ মার্কেটের চৌহদ্দিতে লুছনি বিক্রি করেন।

jarina

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জরিনা জানান, করোনার আগে রিকশাচালক স্বামী ও তার আয়ে বেশ ভালোভাবেই সংসার চলছিল। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় দুজনের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ ছুটির সময় মাঝে মাঝে তার স্বামী রিকশা নিয়ে বের হলেও পুলিশ রিকশা আটকে রাখত। তাছাড়া যাত্রীও পাওয়া যেত না। ওই দুই মাস কখনও একবেলা খেয়ে, দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। যা আয় হতো তা দিয়ে পাঁচজনের খাবার জুটত না। অনেক সময় ছোট ছোট সন্তান তিনটির মুখে খাবার তুলে দিয়ে তারা পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন বলে জানান।

জরিনা জানান, গত মাস থেকে মার্কেট খুললে ঘরের বাইরে কাজে বের হন। তার ছোট সন্তানের বয়স মাত্র আট মাস। স্বামী সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় বস্তির ঘরে শিশুটিকে কারও কাছে রেখে আসারও সুযোগ নেই। তাই আট মাস বয়সী শিশুকে বিশেষ কায়দায় কাঁধে ও বুকে বেঁধে সঙ্গে নিয়ে আসেন। গত মাসে মার্কেট খুললেও ক্রেতা খুব একটা হয়নি। তবে এ মাস থেকে মার্কেটে লোকজন আসতে শুরু করায় লুছনি বিক্রি বেড়েছে।

jarina

জরিনা যখন কথা বলছিলেন তখন আনুমানিক চার পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে সামনে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটির হাতেও লুছনির বান্ডিল। একহাতে লুছনি আরেক হাতে মাস্ক তার। জরিনা সামনে এগিয়ে আদরমাখা সুরে ছেলেটিকে মুখে মাস্ক পরিয়ে দেয়। জানতে চান লুছনি বিক্রি হয়েছে কিনা। না সূচক জবাব দিলে শিশুটির গালে চুমো দিয়ে মার্কেটে ঘুরে লুছনি বিক্রির চেষ্টা করতে বলেন। ওই সময় বুকে-কাঁধে বেঁধে রাখা শিশুটিকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখা যায়।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ

সর্বশেষ - জাতীয়