আগুন লাগানো হয়েছে, অভিযোগ ব‌্যবসায়ীদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

সোমবার রাত ২টার দিকে আগুন লাগার পর ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। দ্বিতল মার্কেট ভবনের পূর্ব দিকের একটি অংশ ধসে পড়েছে ভোরের দিকেই।

গুলশান-১ নম্বরে সিটি করপোরেশনের প্রায় সাত বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বিপণি বিতানে কাঁচা ও পাকা মার্কেট মিলিয়ে দুই অংশে দোকান রয়েছে ছয়শর মত। নিচতলায় বড় একটি অংশে আসবাবপত্রের পাশাপাশি খাবার ও গ‌্যাস সিলিন্ডার মেরামতের দোকান রয়েছে। দোতলায় রয়েছে আমদানি করা খাদ‌্যপণ‌্য, প্রসাধনী, পোশাক, প্লাস্টিক পণ‌্য, গয়না ও ইলেকট্রনিক্স পণ‌্যের দোকান। আর নিচতলায় পূর্ব অংশে রয়েছে কাঁচাবাজার।

পাকা মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এম তালাল রিজভী বলেন, রাত আড়াইটার দিকে আগুন লেগেছে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

“তখন ফায়ার সার্ভিসের মাত্র দুটি ইউনিট ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের স্বল্পতার কারণে দুই মার্কেটই আগুনে পুড়েছে। ভোর ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট বাড়ানো হয়। আগে বাড়ালে ক্ষতি এত হত না।”

ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ জানাতে না পারলেও দুই মার্কেট মিলিয়ে কমপক্ষে দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করেন রিজভী।

১২৯ নম্বর দোকানের মালিক মো. বাবু বলেন, “মার্কেট বিক্রি হয়েছে কয়েক বার। ভাঙতে না পেরে সিস্টেমে ফেলে দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে কেউ আগুন দিয়েছে।”

ব্যাবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের ছিল খেলনার দোকান। দুদিন আগে নতুন মাল তুলেছিলেন তিনি।

দেলোয়ার বলেন, “একটা সুতাও বের করতে পারি নাই। সব জিনিসপত্র ছাই হয়ে গেছে। যারা মার্কেট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছিল তারাই আগুন দিয়েছে। এই মার্কেটটা ঘিরে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হত। সবার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”

ডিসিসি কাঁচাবাজার ব‌্যসায়ী সমিতির সহসভাপতি ১৯ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন সিদ্দিকী জানান, সাত বিঘা জমির ওপর এই মার্কেটের পাকা মার্কেট অংশটি আছে ১৯৬২-৬৩ সাল থেকে। ১৯৮২ সালে সিটি করপোরেশন কাঁচা মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয়।

২০০৩ সালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে মার্কেটের জায়গায় পিপিপির আওতায় ১৮ তলা গুলশান ট্রেড সেন্টার নির্মাণের দরপত্র দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েও তা করতে অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেট্রো গ্রুপের আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ওই চুক্তিতে বলা হয়, ভবনের আটতলা পর্যন্ত থাকবে দোকান, নয় থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত হবে অফিস। দুই হাজার ২৪টি দোকানের মধ্যে ডিসিসি পাবে ২৭ শতাংশ। আর আমিন অ্যাসোসিয়েটস ৭৩ শতাংশ দোকান পাবে এবং তা বিক্রি করে লাভ তুলে নেবে।

কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই চুক্তি স্থগিত করে ভবনে ডিসিসির মালিকানা বাড়াতে বলা হয়। এরপর ডিসিসির মালিকানা বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করে নতুন চুক্তি হয়।

কিন্তু দোকান মালিক সমিতি এরপর মামলা করলে ঠিকাদার কোম্পানি সেখানে আর ভবন তুলতে পারেনি বলে জানান ডিসিসি কাঁচাবাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং মেট্রো গ্রুপ এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত।”

ডিসিসি পাকা মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি জয়নাল আবেদিনও একই সন্দেহের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “এটা পরিকল্পিতভাবে কেউ করেছে। আমরা দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”

দোকান মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে দুপুরে মেট্রো গ্রুপের গুলশান কার্যালয়ে গেলে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলছেন, নাশকতা নয়, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুন লেগেছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

মার্কেটের আগুন কীভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। এ বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন্স অ‌্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, “একটা বিল্ডিং কলাপস করেছে। কোনো ক‌্যাজুয়ালটি হয়নি। এখানে কমবাস্টেবল ও ফ্লেইম্লে লিকুইড ছড়িয়ে আছে। ডেঞ্জারাস জিনিসপত্র আছে।”

দুপুরে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা- তা খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ, দোকান মালিক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করা উচিৎ।

ব্যবসায়ীরা ফায়ার সার্ভিসের কাজে ধীরগতির অভিযোগ আনলেও অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস বলছে, মার্কেটে অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচা মার্কেট সমিতির সহসভাপতি হুমায়ুন সিদ্দিকী বলেন, তাদের গোটা ১৫ এক্সটিংগুইশার ছিল। আগুন লাগার পর সেগুলো ব‌্যবহার করে নেভানোর চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “কীভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।”.

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর