আগুনে পুড়ছে আমাজন: নেভাতে যা করা হচ্ছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গত কয়েক দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বলছে বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য আমাজন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই বনটি পরিচিত পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে। কারণ সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয় তার ২০% আসে এই আমাজন থেকে।

দাবানলের কারণে মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল পুড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিশ্বনেতারা। ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টুইট করে বলেছেন, “আমাদের বাড়ি পুড়ে যাচ্ছে।”

এখন এই আগুন নেভাতে ব্রাজিলকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন তারা।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের এক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নেতারা এজন্যে অর্থনৈতিক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার কথাও ঘোষণা করেছেন।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আমাজনের আগুন নেভাতে এই জোটের পক্ষ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়া হবে।

কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত হয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

মি. ম্যাক্রোঁ জানান, অনতিবিলম্বেই প্রতিশ্রুত এই অর্থ সরবরাহ করা হবে।

ফরাসী নেতা আরও বলেছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার দেশ সামরিকভাবেও ব্রাজিলকে সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেছেন, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বনাঞ্চল আবার কীভাবে গড়ে তোলা যাবে তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে।

ব্রাজিলের অনেক জায়গাই এখন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, তবে তার বেশিরভাগই আমাজনে। প্রতিবছরই দাবানলের ঘটনা ঘটে ব্রাজিলে। তবে এবারে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি।

মি. ম্যাক্রোঁ এই আগুনকে ‘আন্তর্জাতিক সঙ্কট’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং জি-সেভেন সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে এবিষয়ে কিছু করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে গবেষক এবং ইটালিতে ভেনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: সৌর দাসগুপ্ত বলেন, “ব্রাজিলে এখন শুষ্ক মওসুম চলছে এবং এবারের খরা মওসুম অন্যান্য বারের চেয়ে প্রকট। এজন্যে বাতাস কম, বৃষ্টি কম। ফলে দাবানল খুব বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।”

এই আগুন নেভাতে ব্রাজিল সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা হচ্ছে সারা বিশ্বেই।

অনেকেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ যে আগুনের কারণে আমাজন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেটা নেভাতে মি. বলসোনারো তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

ব্রাজিল কী করছে?

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো আগুন নেভাতে সামরিক বাহিনী নামানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছেন।

ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় ৪৪ হাজার সৈন্য আমাজনের আগুন নেভাতে কাজ করবে। সাতটি রাজ্যে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টিও অনুমোদন করা হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধবিমানও।

অনেকেই ব্রাজিল সরকারের সমালোচনা করছেন আগুন নেভাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেওয়ায়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এজন্যে ব্রাজিলকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই খবরটি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো নিজেই।

কিন্তু এর আগে বিভিন্ন দেশ যখন অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছে তখন তিনি তাদের সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে তারা ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করছে।

আগুন নেভাতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে প্রস্তাবিত বাণিজ্য সমঝোতা বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন। এই চুক্তিটির জন্য গত ২০ বছর ধরে আলোচনা চলছে।

ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ব্রাজিল সরকার যদি যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে তারা ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানিও নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।

আগুনের ভয়াবহতা কতখানি?

ব্রাজিলে শুষ্ক মওসুমে প্রায়শই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে দেশটির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৮৫% বেড়ে গেছে।

তারা বলছে, এবছরেই ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে এবং তার বেশিরভাগই ঘটেছে আমাজন অঞ্চলে।

আগুন নেভাতে ব্রাজিল সরকারের 'দুর্বল' ভূমিকার প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

পরিবেশ রক্ষায় যারা আন্দোলন করছেন তারা এসব অগ্নিকাণ্ডের সাথে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর পরিবেশ নীতিকে দায়ী করেছেন।

অভিযোগ আছে যে ইচ্ছে করেই এই অরণ্যে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আমাজন কেন গুরুত্বপূর্ণ

আমাজন বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য যা প্রচুর কার্বন শুষে নেয়। সেকারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতেও সাহায্য করে এই অরণ্য। এর বেশিরভাগ এলাকাই বিস্তৃত ব্রাজিলে।

কার্বন শুষে নিয়ে অক্সিজেন ছাড়ার কারণে এই অরণ্যটি পরিচিত ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে।

ড: সৌর দাসগুপ্ত বলেন, “দাবানলের কারণে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড নিঃসৃত হচ্ছে যা শুধু ব্রাজিলের জন্যেই নয় আশেপাশের সব দেশগুলোর জন্যেও খুবই ক্ষতিকারক।”

তিনি জানান কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কার্বন মনোক্সাইডের দূষণ প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত চলে গেছে।

এখানে আছে ৩০ লাখেরও বেশি প্রজাতির গাছপালা ও বন্যপ্রাণী। আছে দশ লাখেরও বেশি আদিবাসী।

ড. দাসগুপ্ত জানান, পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্যের দশ শতাংশ আসে এই আমাজন থেকে।