আখের দাম বাড়ালো জয়পুরহাট চিনিকল, চলবে ২৫ দিন

জয়পুরহাট প্রতিনিধি :
কৃষকদের জমিতে বছরে উচ্চ মূল্যের তিন ফসল উৎপাদন হয়।

এছাড়া আখের দাম কম, আখ চাষে সময় বেশি লাগা ও টাকা তুলতে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন কৃষকরা। তাই আখের চাষ কমে যাওয়ায় জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে বন্ধের দ্বারপ্রান্তে।

চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার আখের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই কৃষকরাও আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে জয়পুরহাট চিনিকল আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।

জানা গেছে, ১৯৬০ সালে ২১৬ একর জমির ওপর ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট চিনিকল। আর চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এরপর থেকেই এ জেলা ও আশপাশের জেলাতে কৃষকরা ব্যাপক আখ চাষ করতেন। চিনি উৎপাদনে এ সুগারমিলটি (চিনিকল) বর্তমানে রয়েছে দেশের শীর্ষে।

কৃষকরা জানান, আখ চাষ করতে ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগে। কিন্তু একই সময়ে সেই জমিতে তিন ফসল চাষ করা যায়, লাভও বেশি হয়। গেল মৌসুমে আখের দাম কম ও টাকা তুলতে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এখানকার কৃষকরা।

চিনিকল সূত্র বলছে, এক সময় চিনিকলে চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত আখ মাড়াই চলত। কিন্তু বর্তমানে আখ চাষ কমে যাওয়ায় গেল মৌসুমে মাড়াই কার্যক্রম চলেছে মাত্র ১৯ দিন। এতো অল্প সময় মিলটি চালু থাকায় শ্রমিক ও কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকের আশঙ্কা, দেশের অন্য চিনিকলের মতো এ মিলটিও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে মিলটি বেশি দিন চালু ও টিকিয়ে রাখার জন্য সুগারমিল কর্তৃপক্ষ কৃষকদের নানা রকম প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও প্রণোদনা দিচ্ছে। আখের দাম ১৮০ টাকা মণের পরিবর্তে দাম বাড়িয়ে ২২০ টাকা করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আখ চাষিদের প্রতি একর জমিতে সার, বীজ, সেচে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১৬শ একর জমির জন্য ২২শ আখ চাষিকে ৪২ লাখ টাকা প্রণোদনা দিচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে আখের চাষ বাড়াতে জেলা কৃষি বিভাগ আখ চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছে। এসব নানা পদক্ষেপ নিয়ে দেশের বৃহত্তম সুগারমিলটি এ বছর ২৫ দিন চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আখ চাষ বাড়িয়ে পরবর্তী মৌসুমগুলোতে আরও বেশি দিন মিল চালু রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

জেলায় এবার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে ১ হাজর ৮০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন চিনি। মিলে খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা ও প্যাকেট ১০৫ টাকা। বিগত সময়ে ৩৩৫ কোটি টাকা লোকসান ছিল। গত মৌসুমে সুগারমিলটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটিতে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকশ্যাম গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ধান, আলু, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করলে উত্তোলনের পর হাট বাজারে বিক্রি করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাই। বছরে তিন থেকে চারটি ফসল হয়। আর আখ চাষ করলে ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগে, দাম কম। তাই এ ফসলটি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

খঞ্জনপুরের আবু রাইহান বলেন, আখের টাকা ডবলার ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেকদিন পর দেয়। আমরা এতো কিছু বুঝি না, ফসল বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা নেব অন্য ফসলের মতো। এজন্য আখ চাষ অনেকেই বাদ দিয়েছেন।

জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব রুমেল জানান, নানা চড়াই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এ মিলটি পরিচালিত হচ্ছে। যে কারণে আমাদের শ্রমিক কর্মচারীদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। গত মৌসুমে ১৯ দিন মিলটি চালু থাকলেও সম্ভবত এ মৌসুমে তা বাড়িয়ে ২৫ দিন চালু রাখা হবে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, উচ্চ মূল্যের বিকল্প ফসলের কারণে আখ চাষ কমেছে। আমরা আখ চাষকে লাভবান করার জন্য আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে আখের মূল্য ১৮০ টাকা মণ ছিল। এবার তার পরিবর্তে প্রতিমণ ২২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আখ চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, ঋণ সহায়তা দিয়ে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করে সামনের মৌসুমে আরও বেশি দিন মিলটি চালানোর চেষ্টা করছি।