আইসিসিবিতে জমজমাট বিয়ের মেলা ও র‌্যাম্প শো

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

দিনভর খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান আর আনন্দ-উৎসবে কাটে বিয়ের দিন। জীবনের এই বিশেষ আনন্দক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে চলে দীর্ঘ আয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনকে নিখুঁত করতে বহু পরিকল্পনা ও কেনাকাটার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিস্তর এই কর্মযজ্ঞকে সহজ ও আরো নান্দনিক করে তুলতে শুরু হলো আইসিসিবি নিবেদিত ‘বাংলাদেশ ওয়েডিং এক্সপো ২০২২’।

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পৃষ্ঠপোষকতায় লিংক্স ইভেন্টস ও ফেসটিভিটি ইভেন্টস তিন দিনের এই জমজমাট বিয়ের মেলার আয়োজন করেছে। ফ্যাশন ডিজাইনার, রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ, বিয়ের আলোকচিত্রী, উদ্যোক্তা ও খাবার-দাবার বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে প্রথম দিনেই জমে উঠেছে এই মেলা। প্রথম দিন অতিথি হিসেবে মেলা ঘুরে দেখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

kalerkantho

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইসিসিবির রাজদর্শন হলে প্রবেশ করতেই বিশাল দুটি ময়ুরপঙ্ক্ষীর আদলে নির্মিত প্যাভিলয়ন চোখে আটকে যায়। মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক আইসিসিবির এই প্যাভিলিয়নে কথা হয় মো. মনিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে। আইসিসিবির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম পলাশ জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ভেন্যু হল আইসিসিবি। এখানে এক সঙ্গে ২০ হাজার মানুষের আনন্দ উদযাপনের সুযোগ রয়েছে। আমাদের গুলনকশা, পুষ্পগুচ্ছ, রাজদর্শন, নবরাত্রি ও একটি সেমিনার হল মিলিয়ে মোট পাঁচটি হল রয়েছে। হলগুলো আয়োজনের উপযোগী করে ছোট বড় আকারে নির্মিত বলে সব ধরনের অনুষ্ঠানই এখানে করা যায়। আমাদের রয়েছে নিজস্ব ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ভেন্যুসেবা। ফলে বিয়ের মতো স্মরণীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের সেরা জায়গা আইসিসিবি। আমরা সাধারণত কোনো ছাড় দিই না। তবে এই মেলা চলাকালে বছরের যে কোনো দিনের জন্য হল বুকিং দিলেই ১৫ ভাগ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে। এই সুযোগ বিয়ের ভরা মৌসুমের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের বৃহৎ পরিসর, প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নিরাপত্তা সুবিধা যে কারো ভালো লাগবে।

kalerkantho

আইসিসিবির উল্টো দিকেই কক্সবাজারের বিখ্যাত সাইমন বীচ রিসোর্টের স্টল। এখানে কথা হয় রিসোর্টের ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. আহসানুল হোসাইনের সঙ্গে। তিনি জানান, এক্সপো উপলক্ষে দুই রাত তিন দিনের হানিমুন প্যাকেজ দিচ্ছে সায়ামন বীচ রিসোর্ট। আরেকটি স্টলে মসলিনের উপর জারদৌসির কাজ করা শাড়ি দেখিয়ে বিক্রয়কর্মী আসমা মাসুদ জানালেন, এক লাখ বিশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার শাড়ি আমরা এনেছি। বিয়ের শাড়ি হিসেবে আছে সিল্ক ও জর্জেটের শাড়িও। কাপতান, সালোয়ার কামিজ ও বিয়ের দিনে শিশুদের সাজসজ্জার পোষাকও আছে। আমরা এই তিন দিন সর্বোচ্চ দশ পার্সেন্ট ছাড় দিচ্ছি। ‘সাভাটা’র সুমাইয়া আফরোজ জানান, তাঁরা বিয়ের পোশাক শারারা-গারারা, কামিজ, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাক, লেহেঙ্গা, শাড়ি, সিঙ্গেল দুপাট্টা ও কাস্টোমাইজ ডিজাইনের পোশাক এনেছেন। বিয়ের পোশাক ৫ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় পাওয়া যাবে তাদের কাছে।

kalerkantho

মেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস। ব্রাইডাল প্যাকেজে তাঁরাও ছাড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে। বায়োজিনের কামরুল হাসান রনি বলেন, তাঁরা লিলাবালি, আনারকলি, কমলা সুন্দরী ও রঙ্গবতী নামের চারটি প্যাকেজ নিয়ে এসেছেন। এসব প্যাকেজের কোনো কোনোটিতে ৭০ হাজার টাকারও বেশি ছাড় রয়েছে।  সন্ধ্যায় ফ্যাশন হাউজগুলো নিজেদের পোশাক নিয়ে আয়োজন করে জমজমাট র‌্যাম্প শো’র। আলোর ঝলকের মাঝে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা সাহা মিমও। ‘সারাহ করিম’, ‘শ্যানটিলি বাই সেলিনা নুসরাত’, ‘নায়িকা অব ঢাকা’, ‘আজমারা’ ‘মুনস বুটিক’ ও ‘নুযহাত নাওয়ারের সৌজন্যে র্যাম্পে বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবী ও অন্যান্য পোশাক পরে হাঁটেন মডেলরা। ফ্যাশন হাউজগুলো নিজেদের ডিজাইনে তৈরি পোশাক দেখিয়ে দর্শক-ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।

র‌্যাম্প শোর এক ফাঁকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় প্রকাশ ঘটে বিয়েতে। হোমডেকর, খাবারদাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, গানবাজনার সমন্বিত আয়োজনে বিয়ের মতো একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন পূর্ণতা পায়। এই মেলায় এসে এক ছাদের নিচে আমি সবই পেয়ে গেলাম। ফার্নিচার থেকে শুরু করে পোশাক পরিচ্ছদ আমি ধরে ধরে দেখেছি, অত্যন্ত মানসম্পন্ন জিনিস। বিয়ের বড় অংশ মিষ্টান্ন, সেটিও এখানে আছে। নিজে খেয়েও দেখেছি। আইসিসিবির সহযোগিতায় এমন দারুণ আয়োজন দেখে আমি এক কথায় অভিভূত।

kalerkantho

অন্যান্যের মাঝে আরো বক্তব্য প্রদান করেন আইসিসিবির প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা এম এম জসিম উদ্দিন, এটিএন নিউজের অপারেশন হেড মোতাহার হোসেন, লিংক্স ইভেন্টসের সিইও নুযাত নাওয়ার, বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালসের পরিচালক (মার্কেটিং ও সেলস) কামরুল হাসান রনি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় আইসিসিবি, বায়োজিন, সাইমন বিচ রিসোর্ট, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, এটিএন নিউজ ও শাবাবাকে। নান্দনিক প্যাভিলিয়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসিম উদ্দিনের হাতে আরেকটি পুরস্কার তুলে দেন। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারও মেলা চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে আইসিসিবি নিবেদিত ‘বাংলাদেশ ওয়েডিং এক্সপো ২০২২’।

 

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ